সোমবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ভারতের পানি আগ্রাসন: এ বন্ধুত্বের শেষ কোথায়?

'পানির অপর নাম জীবন'। পানি মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহের অন্যতম। পানি ব্যতীত মানুষ একদিনও চলতে পারেনা । খাবার পানি যেমন মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে, তেমনি প্রাকৃতিক নদীর পানি মানুষের ফসল উৎপাদনে সহযোগীতা করে যা মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে সহযোগী হয়। একই ভাবে অতিরিক্ত পানির কারণে মানুষের ক্ষতি হয়। পানিতে পড়ে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, বন্যায় মানুষের সর্বস্ব হারাতে হয় । কৃষিজাত দ্রব্য ও উৎপাদিত ফসলের ক্ষতি হয়। এটাই পৃথিবীর বাস্তবতা। এ বাস্তবতা নিয়েই মানুষের চলতে হয়।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ । যার তিন ভাগ জল আর এক ভাগ স্থল। এ দেশের তিন দিকে ভারত এবং এক দিকে বঙ্গোপসাগর। বন্ধু নির্বাচনে প্রত্যেকেই নিকটের এবং কৃতজ্ঞদেরকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সে আলোকে বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু দেশ ভারত।

ভারত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন সময়ে সহযোগীর ভূমিকা রাখলেও স্বার্থ সংশ্লিষ্টতা আসলে সে দিকে আর ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। যার একটি দিক পানি, ফারাক্কা বাঁধ।

ভারত গ্রীষ্মকালে ইচ্ছেমতো পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় পদ্মা অববাহিকায় গোটা বাংলাদেশ পরিণত হয় মরুভূমিতে। অন্যদিকে বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ছাড়ার কারণে প্লাবিত হয় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল।

১৯৬১ সালে পদ্মা (ভারতীয় অংশে গঙ্গা হিসেবে পরিচিত) নদীর ওপর এ বাঁধ নির্মাণ শুরু করে ভারত। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দূরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত এই বাঁধের কাজ শেষ হয় ১৯৭৫ সালে।

বাংলাদেশের কথা চিন্তা না করে শুষ্ক মৌসুমে কলকাতা বন্দর সচল রাখতে (জানুয়ারি থেকে জুন) ফারাক্কা বাঁধ ফিডার খালের মাধ্যমে পদ্মার অধিকাংশ পানি হুগলি নদীর অভিমুখে চালিত করে।

১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির মাধ্যমে ২,২৪০ মিটার লম্বা ফারাক্কার বাঁধ চালু হয়। চুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ শুরু করে। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে সারা দেশের লাখ লাখ মানুষ রাজশাহী থেকে ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চে অংশগ্রহণ করেন।

এর পর থেকে আজ পর্যন্তও বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ফারাক্কা এক মহাঅভিশাপে রুপ নিয়েছে। প্রয়োজনে পানি পায় না বাংলাদেশ। কিন্তু যখন বন্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে অর্থাৎ, পানি যখন অভিশাপ হিসেবে নদীপাড়ের মানুষের কাছে আবির্ভূত হয়, তখন ভারতও এ বাঁধ খুলে দেয়। ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির বিশেষ অবনতি ঘটে।

এবারও এমন ঘটনা ঘটালো ভারত। ভারতের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য সে দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় গঙ্গার ওপর নির্মিত বিতর্কিত ফারাক্কা বাঁধের সবকটি গেট খুলে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো খুলে দিয়ে পানি ছেড়ে দিলে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তাদের মতে, বর্ষাকালে এমনিতেই অন্য সময়ের তুলনায় ফারাক্কায় বেশি গেট খোলা থাকে।

ফারাক্কার গেট সংখ্যা ১০৪টি। এর মধ্যে ১০০টি গেট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে ১১ লাখ কিউসেক পানি সরে যাবে, যাতে বিহারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ইতোমধ্যে অন্তত ৯৫টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

যার প্রভাবে ইতিমধ্যে জেলার দৌলতপুর উপজেলা চিলমারি ও রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিটি ঘরেই পানি ঢুকে পড়েছে। ঘরের মধ্যে মজুদ রাখা পাট, ধান মরিচসহ সব কিছু নষ্ট হয়ে গেছে। এসব এলাকায় তীব্র খাবার পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, পদ্মা নদীতে পানির বিপদসীমা হচ্ছে ১৪ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। সেখানে শুক্রবার দুপুর ১২ টায় পানি প্রবাহিত হয় ১৪ দশমিক ০৬ সেন্টিমিটার। বিপদসীমা থেকে মাত্র পয়েন্ট ১৯ সেন্টিমিটার দূরে।

গত ১৮ আগস্ট এ পানির মাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার। ১৯ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার। ২৫ আগস্ট ছিল ১৩ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার। প্রতি তিন ঘন্টায় ২ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর প্রধান শাখা গড়াই নদেও অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে।

কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নেয়ামূল হক জানান, বিহারে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ভারত তাদের ফারাক্কা বাঁধের দরজা খুলে দিয়েছে। তাতে পদ্মায় পানি বেড়ে যাচ্ছে। যে গতিতে পানি বাড়ছে তাতে যে কোন সময় পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে।

দৌলতদিয়া উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আহমেদ জানান, গত কয়েক দিন ধরে অব্যাহতভাবে পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় চিলমারির ১৮ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তিনি দাবি করেন সাম্প্রতিক সময়ে বন্যায় এতো ক্ষতি আর কখনও হয়নি।

রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ উদ্দিন জানান, রামকৃঞ্চপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের ১২ গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। এখানকার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এলাকায় তীব্র খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাওয়ার কথা ছিল। যাতে করে পদ্মায় অন্তত পানি প্রবাহ থাকতো। খরার দুর্যোগে আক্রান্ত হতো না বাংলাদেশ।

কিন্তু তার বদলে অসময়ে বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত দুই দেশের সীমান্তের দুই পাশের নদীকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীকে বিপদে ফেলছে। কারণ, ফারাক্কা শুধু বাংলাদেশের নয়, ভারতের সীমান্তবর্তী মানুষদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে আসলে ভারত বাংলাদেশের সাথে কতটুকু বন্ধুসুলভ আচরণ করছে? সময় এসেছে ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে চুড়ান্ত কথা বলার, ফারাক্কা বাঁধ আদৌ থাকবে কীনা, থাকলেও তা কিভাবে থাকবে? এই বিতর্কিত বাঁধ একেবারেই তুলে দেয়া যায় কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এটাই উপযুক্ত সময়। দুই দেশের বন্ধুত্ব সর্বকালের রেডর্ক অতিক্রম করছে। বন্ধুত্বের জোয়ারে প্রায় বিনামূল্যে ট্রানজিট প্রদান, বন্দর ব্যবহারের অবাধ সুযোগ ও সুন্দরবনের কাছে রামপালে বিতর্কিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের অনুমতি থেকে শুরু করে ভারতকে শুধু দিয়েই যাচ্ছে সরকার। বিনিময়ে তিস্তা চুক্তিটি পর্যন্ত হয়নি, ফারাক্কা ইস্যুতে হয়নি কোন সুরাহা। একতরফা বন্ধুত্বের ভার আর কতকাল বহন করবে লাখ শহীদের রক্তেভেজা এই স্বাধীন বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে আর কত গোলামীর মতো আচরণ সহ্য করতে হবে দেশবাসীকে?


প্রকাশিত: www.timenewsbd.com/news/detail/88253

মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০১৫

ঐতিহাসিক ৬মেঃ বালাকোট থেকে মতিঝিল

                                                                  মনির আহমেদ
বালাকোট প্রান্তর

১৭৫৭ সালের ২৩জুন বৃটিশদের কাছে পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার যে পরাজয় ঘটেছিল, তা উপমহাদেশের মুসলমানদের জন্য ছিল বড় আঘাত। হাজার বছর উপমহাদেশের শাসন কার্যক্রম পরিচালনার পর হঠাৎ বৃটিশ বাহীনির দখলের আঘাত সামলে নতুন করে নিজেদেরকে গুছিয়ে তুলতে যে অনুপ্রেরণার প্রয়োজন ছিল। সেই অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসাবে মুসলমানরা প্রথম যাকে পান তিনিই শহীদ সাইয়েদ আহমাদ ব্রেরলভী।
সাইয়েদ আহমাদ ব্রেরলভী তাঁর বড় হয়ে ওঠার পথে মুসলিম সমাজে অবক্ষয় লক্ষ্য করেন। তিনি একদিকে যেমন ব্রিটিশ রাজত্বে মুসলমানদের পরাজিত হতে দেখেন, অন্যদিকে মুসলিম সমাজে ঢুকে যাওয়া অনেক কুসংস্কারও প্রত্যক্ষ করেন। ফলে তিনি যেভাবে জিহাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন, একইভাবে মুসলিম সমাজ থেকে কুসংস্কারের বিজ উপড়ে ফেলতেও ছিলেন তৎপর। ‘তরিকায়ে মুহাম্মদী’ নামে যে বিপ্লবী আন্দোলন তিনি শুরু করেছিলেন, তা ছিল সকল কুসংস্কার বাদ দিয়ে শুদ্ধভাবে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) এর অনুসরণ করার লক্ষেই। তিনি আন্দোলন শুরু করে প্রথমে পেশওয়ার নিজের নিয়ন্ত্রনে নেন এবং সেখান থেকেই বৃটিশদের কাছ থেকে উপমহাদেশকে মুক্ত করার আন্দোলন পরিচালনা করা শুরু করেন।  বিপ্লবী এই আন্দোলন নিয়ে ভারতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিল তাঁর স্বপ্ন।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রপথিক, সাইয়েদ আহমাদ ব্রেরলভী (র.)- ছিলেন উপমহাদেশের আযাদী আন্দোলন ও ইসলামের প্রকৃত আদর্শ প্রতিষ্ঠায় এক নির্ভীক সিপাহসালার। তিনি জীবনের মূল্যবান সময়কে দীন ইসলামের জন্য কুরবানী করে গেছেন। উপমহাদেশের মুসলমানদের নিকট বিশেষত ইসলামী আন্দোলন কর্মীদের নিকট মে মাসটি বিশেষ গুরুত্বের দাবী রাখে। ৬ মে ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস। ১৮৩১ সালের এই দিনে বালাকোটের ময়দানে সাইয়েদ আহমাদ ব্রেরলভী শাহাদাত বরণ করেছিলেন। মুসলমানরা সেদিন শিখদের কাছে পরাজয় বরণ করেছিল। কিন্তু সাইয়েদ আহমাদের শিক্ষা, বাতিলকে মোকাবেলা করে কী করে সাহস নিয়ে আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হয়; তা যুগের পর যুগ ধরে প্রেরণার সুউচ্চ মিনার হয়ে রয়েছে। আজো আমরা ফিরে তাকাই বালাকোটের দিকে। চারদিকের আঁধার ভেদ করে আলোর রেখা জ্বালবার সাহস পাই হৃদয়ে।
বালাকোটের ময়দানে সাইয়েদ আহমাদ ব্রেরলভীর যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়াটাই ছিল সাহসের পরিচায়ক। ব্রিটিশ রাজ বা তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়া যায়, ভারতীয় মুসলমানরা এ যুদ্ধের মাধ্যমেই তা বুঝতে পারেন। ফলে সময়ের ব্যবধানে আমরা আরো অনেক প্রচেষ্টা দেখতে পাই। একের পর এক প্রচেষ্টার ফলেই একটা সময়ে ব্রিটিশরা হাল ছেড়ে দিয়ে উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যায়।
বালাকোট যুদ্ধ পলাশীর কয়েক দশক পরের কথা। মূলত এ যুদ্ধ সাইয়েদ আহমাদের পরিকল্পনায় ছিল না।মূলত তিনি তাঁর নিয়ন্ত্রনে থাকা পেশওয়ার নিয়ে বৃটিশদের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরে কাশ্মীরের দিকে যাবেন বলে ঠিক করেছিলেন। ইচ্ছা ছিল কাশ্মীরে কেন্দ্র স্থাপন করে উপমহাদেশকে দখল মুক্ত করবেন। সাইয়েদ আহমাদ কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলে পথিমধ্যেই জনগণের ওপর শিখদের অবর্ণনীয় নির্যাতনের খবর পান। এই খবর পেয়ে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। এ সময়ই শিখদের বিরুদ্ধে তাঁর সাহায্য চান বিভিন্ন এলাকার প্রধানেরা। ফলে তিনি কাশ্মীর সফর স্থগিত করে এ অবস্থার একটা বিহিত করার পথকেই বেছে নেন। ফলে যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে ওঠে।
শিখ সেনাপতি রণজিৎ সিংয়ের ছেলে বালাকোটে আক্রমন করতে পারে, এমন খবর পেয়েই সাইয়েদ আহমদ ভুগাড়মুঙ্গ থেকে বালাকোটে ফেরেন। বালাকোটের জন্য তিনি চমৎকার যুদ্ধ পরিকল্পনা করেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সে যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী শোচনীয় পরাজয় বরণ করে।
বালাকোটে ৭০০ মুজাহিদের বিপরীতে ১০ হাজার শিখ সৈন্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারপরও মুসলমানরা যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দেয়। ৩০০ মুজাহিদের শাহাদাত বরণের উল্টো পিঠে শিখ সৈন্য মারা যায় ৭০০ জন। মুসলমানদের সংখ্যয় কম থাকার পাশাপাশি সে যুদ্ধে রসদও কম ছিল। সাইয়েদ আহমাদ অনেকটা ওহুদ যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।
বালাকোটের কয়েকটি প্রবেশ পথে সাইয়েদ আহমাদ মুজাহিদদের প্রতিরক্ষার জন্য নিয়োজিত করেন। এসব প্রবেশ পথ বাদ দিয়ে বালাকোটে ঢোকা ছিল অসম্ভব। শিখরা অনেক ক্ষতি শিকার করেই সংখ্যাধিক্যের প্রাবল্য নিয়েই একটা সময় বালাকোটে প্রবেশ করে। বলা হতো, বালাকোটের মেটিকোট পাহাড় যার, সেই যুদ্ধে জয়ী হবে। ভৌগলিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই এমন কথা প্রচলিত ছিল।
শিখরা ১৮৩১ সালের ৫ মে মেটিকোট পাহাড়ের শিখরে আরোহন করে। পরদিনই চূড়ান্ত যুদ্ধ হয়। ইসলামী শাসন কায়েমের বৃহত্তর লক্ষ্যকে সামনে রেখে হয়তো সাইয়েদ আহমাদ সে সময় যুদ্ধ না করেই কাশ্মীরের পথ ধরতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। সাইয়েদ আহমাদ পরাজয়ের প্রবল শঙ্কা মেনে নিয়েই যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।
যুদ্ধের দিন ছিল জুময়া বার। সেদিন সাইয়েদ আহমাদ ব্রেরলভী তাঁর সহযোগী শাহ ইসমাইলকে নিয়ে সামনের সারিতেই ছিলেন। মেটিকোটের টিলা ছেয়ে ছিল শিখ সৈন্যদের দ্বারা। যুদ্ধে যে শিখ সেনারা নীচে নেমে আসছিল তাদের অধিকাংশই মুজাহিদদের হাতে নিহত হয়েছিল। কিন্তু তাদের সংখ্যা অনেক থাকায় শিখ সেনারা চারদিক থেকে ধেয়ে আসতে থাকে।
একটা পর্যায়ে মেটিকোটের ঝরণার মাঝে শাহাদাত বরণ করেন সাইয়েদ আহমাদ। শহীদ হন শাহ ইসমাইলও। সাইয়েদ আহমাদের মৃতদেহ শেষ পর্যন্ত পাওয়াই যায়নি। তাঁর শাহাদাতের খবর না জানা থাকায় তাঁকে খুঁজতে গিয়ে আরো অনেকে শাহাদাতের পেয়ালা পান করেন। মৃতদেহ না পাওয়া যাওয়ায় যুদ্ধের পরও অনেক মুসলমান তাঁর শাহাদাত নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
ঐ দিন তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও তাদেরই  প্রেরণায় ভারতে মুসলমানগণ আজাদী আন্দোলনের মাধ্যমে পৃথক আবাসভূমি লাভে উজ্জীবিত হয়েছিলেন।

একই ভাবে নাস্তিক মুরতাদদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের  ৫মে মতিঝিলের শাপলা চত্তরে একত্রিত হয়েছিলেন হেফাজত ইসলামের ব্যানারে বাংলার লাখো লাখো জনতা । দিন শেষে তারা নাস্তিকদের শাস্তির দাবিতে মতিঝিলে অবস্থান করার ঘোষনা দেন। রাত তখন ২টা কেউ ঘুমিয়ে, আবার কেউ এবাদতে রত, ঠিক এই সময়ে  ৬তারিখ ভোর হওয়ার পূর্বেই সাধারন মুসলমানদের উপর আওয়ামী সরকারী বাহীনির চরম নির্মমতা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে মৃত্যু কূপে পরিনত হয় মতিঝিলের শাপলা চত্তর । সাধারন জনতার আত্মচিৎকারে রাজধানী ঢাকার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠে । বাচাঁর জন্য কোন আকুতিই সেদিন সরকারী বাহীনির হৃদয় নরম করতে পারেনি,হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোর পরিনত হয়েছিল গুলিবিদ্ধ মুসল্লিদের বিছানায়। সেখানেও তারা থাকতে পারেননি। অনেকে শহীদ হয়েছেন,কেউ আহত হয়েছেন,কাউকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে,আবার কাউকে চিকিৎসা না নিয়েই বাড়ী যেতে হয়েছে । সারাদেশের সাধারন মানুষরা শুধু ধিক্কার জানানো ব্যতিত কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি । দাবী আদায়ারে অনেক আন্দোলন আমরা দেখেছি, স্বদেশে আন্দোলন দমনের অনেক কৌশলও দেখেছি,কিন্তু সেদিন যা ঘটেছিল অতিতের কোন ঘটনার সাথে মিলানো সম্ভব হবেনা কারোই। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এ নির্মমতা কারো কাম্য হতে পারেনা ।
ইসলাম এবং মুসলমানদের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনরা আসলে যে ন্যক্কারজনক প্রতারণাপূর্ণ কৌশল নিয়েছিলেন সে বিষয়টাও পরিষ্কার হয়েছে। দেখা গেছে, মুখে না বললেও সর্বান্তঃকরণে তারা ইসলামবিদ্বেষীদের পক্ষই নিয়েছিলেন। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা অভিমুখী যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়ার নজির বিহীন ঘোষনা। বাস-ট্রাক থেকে লঞ্চ-স্টিমার শুধু নয়, ট্রেন এবং বিভিন্ন ঘাটে নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছিল আওয়ামী সরকার। ১৯৭১ সালে প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী, এবার লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রতিপক্ষ হয়েছে সরকার নিজেই। আর সরকারের নগ্ন রুপ প্রকাশ পেয়েছে ৬ মে ২০১৩ এর মধ্যরাতে! এর পূর্বে হেফাজতের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পর কথিত শাহবাগি আন্দোলনের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার ঘোষণা দেন, ‘শাহবাগ শান্ত হবে হেফাজতে ইসলামের রক্ত দিয়ে।’
সত্যি সত্যিই এই শাহবাগীরা রাষ্ট্রিয় শক্তির উন্মাদনায় হেফাজতের নিরস্ত্র লাখো জনতার রক্তের হোলি খেলা দেখে তারা এখন শান্ত কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষদেয় রক্তস্নাত কোন আন্দোলনই বৃথা যায়না। ক্ষরিত রক্ত থেকেই আন্দোলনের বীজ অংকুরিত হয়।
যেভাবে বালাকোটের রক্ত উপমহাদেশ থেকে বৃটিশদের বিতাড়নে পারম্ভিক আন্দোলন হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিল,রফিক সালাম জব্বার বরকতদের রক্ত যেভাবে পাকিস্তানী হানাদারদের বিতাড়নের পারম্ভিকা হিসাবে পরিচিত হয়েছিল, একই ভাবে ধর্মপ্রান মুসলমানদের রক্তও ধর্মবিদ্বেশীদের বাংলার জমিন থেকে চিরতরে বিদায়ের  সুতিকাগার হিসাবে পরিচিতি লাভ করবে।
লেখকঃ সাংবাদিক
সধযসবফপাপ@মসধরষ.পড়স




শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৫

খালেদা জিয়ার ওপর হামলা কেন?


মনির আহমেদ

বংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই অওয়ামীলীগের চরিত্র পরিবর্তন হতে শুরু করে। অথবা বলা যায়, স্বাধীনতার পর থেকেই এই দলটির আসল চরিত্র জনগণের সামনে প্রকাশ পেতে শুরু করে। ক্ষমতাই আওয়ামীলীগের একমাত্র লক্ষে পরিণত হয়। এখন এসে মনে হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে হত্যা করেই ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি।
১৯৪৯ সালে ২৩ জুন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ নামে যাত্রা শুরু করে এই সংগঠনটি। তখন সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান অংশের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সেক্রেটারী হিসাবে দায়িত্ব দেয়া হয় টাঙ্গাইলের সামসুল হককে। ১৯৫৫ সালে মুসলিম শব্দটি নাম থেকে বাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ করা হয়। তখন দলে মতানৈক্য দেখা দিলে ১৯৫৭ সালে মাওলানা ভাসানী পদত্যাগ করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
১৯৫৪ সালে একবার যুক্তফ্রন্ট গঠনের মাধ্যমে ক্ষমতার খানিকটা স্বাদ পায় আওয়ামী লীগ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও ১৬৭ আসন পায় দলটি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সরকার গঠন করে। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী বাকশাল গঠন করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। দেশের অভ্যন্তরে অসন্তোষের প্রেক্ষিতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ হত্যা করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে।
২৫ বছর ক্ষমতা থেকে দূরে থেকে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ১৪৬, জামায়াত ৩ ও স্বতন্ত্র ২টি আসন নিয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামীলীগ।
জনগণের ওপর জুলুম-নিপিড়নের কারণে ২০০১ সালে ভরাডুবি হয় তাদের। ২০০৭ সালে নাটকীয় ১/১১ কে পুঁজি করে ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ।
এবার তারা ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকে। একদিকে শুরু করে সাবেক প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচার, অন্যদিকে শুরু করে যুদ্ধাপরাধের নামে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে হত্যার মিশন। সাথে সাথে ক্ষমতায় টিকে থাকতে সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন এনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে নিজেদের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে। শুরু হয় প্রতিবাদ, কিন্তু কোন ভাবেই তারা কারো কথাকে পাত্তা দিচ্ছেনা। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ই নির্বাচন কমিশনের অধীনে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। বিরোধী দল অংশগ্রহন না করে তত্ত্বাবধায়কের দাবি নিয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখে।
২৯ ডিসেম্বর ১৩’ মার্চ ফর ডেমোক্রেসি ঘোষণা করে দেশের মানুষকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। বিক্ষুব্ধ জনতা যেন ঢাকা ঢুকতে না পারে সেজন্য সরকার ঢাকার চারিদিকে বাধার প্রাচীর তৈরি করে। সকল বাধা পেরিয়ে হাজার হাজার মানুষ খালেদার আহ্বানে ঢাকায় আসেন। সেদিন সকাল থেকেই সারা ঢাকায় অনেকটা অঘোষিত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সে সময় সেনাবাহিনীর একটা অংশকে দেখলাম মাইকিং করতে। ‘আপনারা কেউ রাস্তায় বের হবেন না।’
যেখানে কোথাও ৫/৭জন একত্রিত হচ্ছে, সেখানেই পুলিশ তাড়া দিচ্ছে, গুলি করছে, রাস্তায় রাস্তায় মানুষের হয়রানি। কী এক বিড়ম্বনা! মানুষের কথা বলার কোন স্বাধীনতা নেই, রাস্তায় অভয় নিয়ে চলার কোন ফুরসত নেই। শত শত ছাত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। সারাদেশে হাজার হাজার লোক গ্রেপ্তার করা হয়।
বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। সারাদেশে চরম বিরোধীতার মধ্য দিয়ে নামমাত্র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে যায়। যাতে ৫ শতাংশ ভোট পড়ে, যদিও সরকার পরে সেটিকে ৪০ শতাংশ দেখায়। সবচেয়ে হাস্যকর হলো প্রায় ৫৩ টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়েনি।
তারপরও শতভাগ আসন পাওয়ার উল্লাস করে ক্ষমতাসীনরা। কোন বিরোধী দল নাই, যারা আছে তারা সরকারেও আছে, বিরোধী দলেও আছে। বাহ! কী চমৎকার!
দীর্ঘ দিনের জুলুম-নির্যাতন ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অনেকটা হাঁপিয়ে ওঠে বিরোধী দল। তারা সরকারকে কিছুদিন সময় দিয়ে প্রস্তুতি নিয়ে আন্দোলন শুরু করার চিন্তা করে আবার। এভাবে কেটে যায় এক বছর। এ বছরের ৫ জানুয়ারি অবৈধ নির্বাচনের বর্ষপূর্তির দিনে সমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। সরকার কোন ভাবেই করতে দিবেনা। পুলিশের অনুমতি মিলেনি সহিংসতার অজুহাতে। বেগম খালেদা জিয়া অনড় থাকেন, তিনি বের হবেন অফিস থেকে। সমাবেশ করবেনই। সারাদেশ থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় আসে। এক পর্যায়ে খালেদা বের হওয়ার পরিকল্পনা করেন, অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে বসেন। কিন্তু তার অফিসের গেট আটকে রাখা হয়। পুলিশের বেরিকেড ভেঙ্গে ভেতর থেকে গেট খোলার চেষ্টা চলে। সাথে সাথে পুলিশের পিপার স্প্রে নিক্ষেপের ফলে খালেদা জিয়াসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বের হতে না পেরে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে অহ্বান জানান খালেদা জিয়া। অররোধের ঘোষণা দেন তিনি।
সেই থেকে খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকেন তার অফিসে। অবরোধ, হরতাল ৯৩ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। হরতাল অবরোধে এই সময়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের অনেক মানবাধিকার সংগঠন, বিভিন্ন রাষ্ট্র সরাসরী সরকারকে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানালেও সরকার কর্ণপাত করেনি। বরং উল্টো সৈয়দ আশরাফ মন্তব্য করে বসলেন, ‘দুই আনার মন্ত্রী, কাজের মেয়ে মর্জিনা।’ কে না বোঝে এসব ছিল সম্পূর্ণ শিষ্ঠাচার বহির্ভূত।
৬ এপ্রিল কালের কন্ঠের একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, এফবিসিসিআই এর হিসাব মতে দেশে প্রতিদিন অবরোধে প্রায় ক্ষতি হয় দুই হাজার সাত শত কোটি টাকা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির হিসাব মতে দিনে ক্ষতির পরিমান দুই হাজার দুইশত আটাত্তর কোটি টাকা, যা অবরোধকালিন সময়ে প্রায় দুইলাখ কোটি টাকার বেশী।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এত পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হওয়া সত্যেও সরকারের মাথা ব্যাথা হয়নি। একটা বিষয় স্পষ্ট, যদিও আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করেছে, কিন্তু তারাতো জানে জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত নয়। সুতরাং জনগণের ক্ষতি হলেও তাদের কোন সমস্যা নেই।
এই সময়ে খালেদা জিয়ার ওপর চলে মানসিক নির্যাতন। মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়া হয়, যদিও তারা তাঁকে গ্রেপ্তার করেনি। ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা যাওয়ার পর তার মামলার দায়ভার হিসাবে স্ত্রী, কন্যাদের আসামী করা হয়। কোন পথেই যখন আন্দোলন থেকে ২০ দলকে ফেরানো যাচ্ছিল না, তখন সরকার ঘোষণা করে তিন সিটি নির্বাচন।
অনেকটা হঠাৎ করেই খালেদা জিয়া ৫ এপ্রিল আদালত থেকে জামিন নিয়ে গুলশানের বাসায় যান। রাজনীতিতে অনেকটা স্বস্তি আসে, তিন সিটিতে হরতাল-অবরোধ শিথিল করা হয়। যদিও গুঞ্জন আছে সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই এই নির্বাচনে যাওয়া ও আন্দোলন থেকে সরে আসা। যাক, সেটি ভিন্ন আলোচনা।
বিএনপি নেতৃবৃন্দ তখন থেকেই ঘোষণা দিতে থাকেন খালেদা জিয়া নির্বাচনে ঢাকায় চষে বেড়াবেন। আস্তে আস্তে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যায় অনেকটা অজান্তেই। নির্বাচনে মির্জা আব্বাস, তাবিথ, মঞ্জুরের মননোয়ন বৈধ হওয়ায় নির্বাচনে কাজ শুরু হয়। পরিবেশ জমজমাট হয়ে ওঠে।
খালেদা জিয়াও পরিকল্পনা অনুযায়ী গণসংযোগ শুরু করেন। গাত্রদাহ শুরু হয় আওয়ামী নেতা কর্মীদের। আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক ড.হাসান মাহমুদ ঘোষণা করেন খালেদা জিয়া গণসংযোগে বের হলেই তাঁকে ঘেরাও করা হবে। পরবর্তীতে অন্য আরেকটি পোগ্রামে তিনি বলেন, ঘেরাও করে ধোলাই দেয়া হবে। অন্যদিকে আওয়ামী বুদ্ধীজীবি মহল একটি পোগ্রাম থেকে জানতে চান, খালেদা জিয়া কোন হিসাবে গণসংযোগ করছেন । স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাস পুড়িয়ে কীভাবে বাসে ভোট চান। খালেদা জিয়াই তাদের জন্য চক্ষুশুল!
১৯ এপ্রিল খালেদা জিয়া যান উত্তরায় গণসংযোগে। সেখানে আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কালো পতাকাসহ হামলা করে তার গাড়িবহরে। তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, খালেদা গণসংযোগ শেষে ফিরে আসেন।
২০ তারিখ তিনি কাওরান বাজারে যান। গণসংযোগের এক পর্যায়ে সবার উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন গাড়ির পার্শ্বে দাঁড়িয়েই। হঠাৎ আক্রমন করা হলো গাড়িবহরে। খালেদা জিয়া গাড়িতে ঢুকে যান। পুলিশের উপস্থিতিতে ভাঙচুর করা হয় অর্ধশত গাড়ি। আহত হন সিএসএফ কর্মকর্তাসহ ১২ জন, মাথায় আঘাত পান ৫ জন। সে দৃশ্য যে কাউকে আতঙ্কিত ও বিচলিত করবে।
কিছুক্ষণ পরেই প্রধানমন্ত্রীর একটা বক্তব্য সবার নজরে এসেছে। তিনি বললেন, ‘সিএসএফ এর কোন অধিকার নেই গুলি করার। সব খালেদার নাটক। আর কত নাটক করবেন। আর কত জনগনের রক্ত নিয়ে খেলবেন।’ বাহ! কী চমৎকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য!
স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বললেন হামলার জন্য সিএসএফ দায়ী। প্রধানমন্ত্রী তনয় জয় বললেন জনগনের ক্ষোভের বহিপ্রকাশ। কী সুন্দর সব কথা!
২১ তারিখ খালেদা জিয়া আবার ভাঙ্গা গাড়িবহর নিয়ে বের হলেন গনসংযোগে। রাত ৮টার দিকে ফকিরাপুলে আবার গাড়িবহরে হামলা করা হলো। তিনি সেদিন আর কোথাও না গিয়ে বাসায় চলে যান।
২২ তারিখ আবার গনসংযোগে হামলা করে সরাসরি খালেদার গাড়ি ভাংচুর, গুলি করা হলো। সিএসএফ সদস্যদের রাস্তায় ফেলে সাপের মত পিটানো হলো। সাবেক পুলিশের আইজিপিসহ অনেককে আহত করা হলো।

 অনেকে রক্তাক্ত হলো। হামলার ধারাবাহিকতা দেখলে মনে হয় প্রথম দিন থেকে দ্বিতীয় দিন ভয়াবহ, ক্রমে এই হামলা আরো ভয়াবহ হয়েছে। প্রশ্ন হলো, কেন তাঁকে গণসংযোগে বাধা দেয়া হচ্ছে। কেন তার ওপর হামলা করা হচ্ছে? কেন গুলি করা হচ্ছে? কেন রক্তাক্ত করা হচ্ছে তার নিরাপত্তা কর্মীদের? কেন পুলিশের সামনে ঘটনা ঘটলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? কেন হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে একটি টিয়ারশেলও নিক্ষেপ করা হলো না? কেন ঘটনা ঘটিয়ে আবার আওয়ামীলীগ নেতা মামলা করে? কেন আবার শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়ে বলেন, এগুলো নাটক?
তাহলে জনগণ কি ধরে নেবে সরকার পাকিস্তানের বেনজির ভূট্টোর মত খালেদা জিয়াকে হত্যা করার চেষ্টা করছে? খালেদাকে হত্যা করেই ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বপ্ন দেখছে?

লেখকঃ সাংবাদিক
সধযসবফপাপ@মসধরষ.পড়স






রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরবে কে?


                                                              মনির আহমেদ
কুমিল্লায় দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত শহর সভাপতি সাইফুলের গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকার ছবি

ছাত্রলীগ, ছাত্রসমাজের কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। ছাত্র রাজনীতির নামে ছাত্র হত্যার মহা উৎসবে মেতে উঠেছে এই সংগঠনটি। কে বিরোধী আর কে নিজ দলের বাছাই করার সময় এই দলের ক্যাডারদের হাতে নেই। সংঘর্ষে লিপ্ত থাকা, অপরকে পিটিয়ে ছাতু বানানোই এদের কাজ। ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করা এখন তাদের কাছে ডাল-ভাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষক নির্যাতনেও বেশ এগিয়ে। এদের অপকর্মের তালিকা করতে বসলে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে।
আজকের লেখার এই শিরোনামটি তৈরি করে রেখেছিলাম চার মাস আগেই। কিন্তু বিভিন্ন ব্যস্ততায় সময় করতে না পারায় লেখা হয়ে উঠেনি। সাথে এই ভাবনাটিও অবশ্যই ছিল যে সত্য তুলে ধরতে গিয়ে কার চক্ষুশুল হতে হয়! কারা আবার কি মনে করে! আজ সিদ্ধান্ত নিয়েই লেখা শুরু করলাম।
ছাত্রলীগের এরা তো আমার দেশের সন্তান, আমাদেরই কারো ভাই, কারো আত্মীয়, কারো প্রতিবেশী। এরা হয়তো দেশের কল্যান ও ছাত্রসমাজের জন্য কিছু করার চিন্তা নিয়েই রাজনীতিতে এসেছিল । দুঃখজনক হলেও সত্য, কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তারা আজ ছাত্রসমাজের অঘোষিত শত্রুতে পরিণত হয়েছে।
নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এসকল ছাত্রনেতাদেরই কেউ কেউ ব্যবহার করছে। সমাজে তৈরি করছে প্রতিহিংসার দাবানল, ভাইয়ে ভাইয়ে শত্রুতা। ক্ষমতার মুলা সামনে ঝুলিয়ে ছাত্র রাজনীতির নবীন ছেলে বা মেয়েটিকে করে তুলছে অন্ধ। কেউ সমাজে পরিচিতি লাভ করছে ক্যাডার, আবার কেউ সন্ত্রাসী, কেউ অমুক-তমুক ভাইয়ের ডান-বাম হাত হিসাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন আসা ছাত্রটি যে লক্ষ্য নিয়ে ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, তা আর বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বরং সে হয়ে উঠছে প্রতিহিংসাপ্রবন। কাকে টেক্কা দিয়ে কীভাবে ওপরে ওঠা যায়, এটাই চিন্তায় থাকে। সে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে নিজেই শুধু ক্ষমতাধর হবে, অন্য কেউ যেন না হয়। এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়েই নেতৃত্বের একটা জায়গায় আসার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। নেতৃত্বের প্রত্যাশা নিয়েই শুরু হয়ে যায় অপরের সাথে দ্বন্দ।
গত ১১এপ্রিল কুমিল্লায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সেক্রেটারী সিদ্দিকী নাজমুল আলম গিয়েছিলেন কর্মী সভা করার জন্য। মূলত সেখানে কাউন্সিল মিটিং কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সভাপতি-সেক্রেটারীর উপস্থিতিতেই সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। নেতারা কমিটি গঠন সম্পূর্ণ না করেই ফিরে আসেন। পর দিন মারা যায় সাইফুল নামের একজন। গুলির পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে সাইফুলকে ছুরি দিয়ে আহত করে তাদেরই অপর পক্ষ। সাইফুলের নিথর দেহ এমনভাবে রাস্তায় পড়ে ছিল তা যে কোন বিবেকবান মানুষেরই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটাতে বাধ্য।
ঠিক যেভাবে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে জামায়াত-শিবিরের মুজাহিদ, মাসুম, জসিমদের লাশ পড়েছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বেশী কষ্ট অনুভব করেছি কারন সাইফুল আমর খুব পরিচিত ছিল। সাইফুল স্থানীয় এমপি বাহারের গ্রুপ করে, যারা মেরেছে সুমন দাসের নেতৃত্বে, তারা রেলমন্ত্রী মজিবুল হকের গ্রুপ করে।
একই ভাবে ১৬এপ্রিল সন্ধ্যা সাতটায় হল দখলকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রিকালচার বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও রংপুরের কিশোরগঞ্জ গ্রামের মিল্টন এবং বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও দিনাজপুর সদর উপজেলার বড় গুড়গোলা এলাকার জাকারিয়া নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে গুরুতর অবস্থা ছয়জনের।
দিনাজপুরের এই ঘটনাও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণেই হয়েছে।  সেখানে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রিয়েল ও সাধারণ সম্পাদক অরুণের সমর্থকদের সাথে ছাত্রলীগের রজ্জবের সমর্থকরা শেখ রাসেল হলের দখল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
 এর আগে গত বছরের ২০ নভেম্বর শহর ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাবিপ্রবিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে নিহত হন সিলেট সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুমন। ২২ নভেম্বর প্রথম আলো পত্রিকায় শিরোনাম হয়- “ছাত্রলীগ বনাম ছাত্রলীগ, ৬ বছরে নিহত ৩৯”। সেখানে বলা হয়েছে এই হিসাব ২০০৯সালের ১ জানুয়ারী থেকে ২১ নভেনম্বর ২০১৪ পর্যন্ত। সেখানে আরো তুলে ধরা হয়েছে এ সকল কর্মকা-ের কারণে ছাত্রলীগ ১৬৩ জনকে বহিষ্কার করেছে। যদিও এ সকল বহিষ্কার শুধুই লোক দেখানো।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ফিল্মি কায়দায় ভারী অস্ত্র হাতে ছাত্রদের উপর আক্রমনের ঘটনা ঘটিয়ে বহিস্কার হয়েছিল যে তুহিন, সেই তুহিনই আবার পরে বিশ্ববিদ্যালয় সেক্রেটারী হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অস্ত্রের প্রশিক্ষণের কথা মনে হয় সবারই কম বেশী জানা আছে। এর আগে আরো কত হত্যাকান্ড যে ঘটেছে এর কোন ইয়ত্তা নেই।
ছাত্রী নির্যাতনের কথা বলতে গেলে আসলে নিজেদেরকেই লজ্জিত হতে হয়। সেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানিকের সেঞ্চুরির ঘটনা সকলেরই মনে থাকার। আজো অবাক হই, মানিক সেঞ্চুরি করে মিষ্টি বিতরণ করে উৎসব পালন করেছিল! তখন মন্ত্রী পর্যায়ের একজন নাকি তার পিঠে চাপড়িয়ে বলেছিলেন, দুষ্ট ছেলে এসব করতে নেই! বাহ!
এই পয়লা বৈশাখে যা দেখালো তারা! টিএসসি, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ যতগুলো ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার সবকটিতেই ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা জড়িত। এ সকল গঠনায় নিজ দলের ৮ জনকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিতও হয়েছে। পর্দার অন্তরালে যে আরো কত কী ঘটছে!
ছাত্র-ছাত্রীদের নির্যাতনের পাশাপাশি শিক্ষকরাও বাদ যাচ্ছে না ছাত্রলীগের হাত থেকে। গত ১২ এপ্রিল ফেইজবুকের একটি কমেন্টের সূত্র ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যায়ের শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলমকে তার ডিপার্টমেন্টে গিয়ে লঞ্চিত করে ছাত্রলীগ। তার সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে তা শুধু ছাত্রলীগ নয় পুরো ছাত্রসমাজকে লজ্জিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির আহ্বানে বিচারের দাবিতে সেখানে একাডেমিক কর্মবিরতি চলছে। অন্যদিকে আবার ছাত্রলীগই সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ফেইজবুকের কমেন্টের বিচার চেয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছে। শিক্ষক নির্যাতন করে আবার মামলা দায়ের!
গত নভেম্বর ২০১৪ হাবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ তিনজনকে বহিষ্কার করার পরে কয়েকজন শিক্ষকদের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা হয়। পরে শিক্ষকরা আবার বাধ্য হয়ে আন্দোলনে নামেন। 
গত কিছু দিন আগে প্রশ্ন ফাঁস ছিল সকলের মুখেমুখে। এ ক্ষেত্রেও ছাত্রলীগই প্রধান ভূমিকায়, তা পত্রপাত্রিকার মাধ্যমে দেশের মানুষ জানতে পেরেছে।
এছাড়া অপহরণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দরপত্র নিয়ন্ত্রণ, ভর্তি-বাণিজ্য, সাংবাদিক-পুলিশের ওপর হামলাসহ নানা ঘটনা বারবারই ঘটিয়ে আলোচনায় এসেছে, আসছে ছাত্রলীগ।
হায়রে ছাত্ররাজনীতি! হায়রে ছাত্রলীগ! হায়রে মনুষত্ববোধ!
প্রশ্ন হলো, শুধু কি ছাত্রলীগই দায়ী? নাকি ছাত্রলীগের পাশাপাশি যারা তাদেরকে আজ বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা দিয়ে নিজের কাজে ব্যবহার করছে তারাও দায়ী? ছাত্ররাজনীতি তো হবে ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতার জন্য, কল্যানের জন্য, ভবিষ্যত সৎ যোগ্য আদর্শ নেতৃত্ব তৈরির জন্য। এখনই যদি ছাত্র নেতারা প্রতিহিংসা, লুটপাট, দখলদারী, অনৈতিকতার সাথে জড়িয়ে যায়, তাহলে জাতি তাদের কাছ থেকে কি পাবে?
বর্তমানে ছাত্রলীগের যে অবস্থা, তাতে এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধের দাবি তোলা অস্বাভাবিক হবেনা। কিন্তু আওয়ামী সরকার ছাত্রলীগকে বড় আদরেই রেখেছে। এই সন্ত্রাসী সংগঠটির লাগাম টেনে ধরা আজ সময়ের দাবি। কিন্তু কে ধরবে? কারা সেই সাহসী?
লেখক: সাংবাদিক

বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৫

বর্ষবরণ: অপসংস্কৃতিই যেন হয়ে উঠেছে সংস্কৃতি


                                                                মনির আহমেদ

বর্ষবরণ এখন যেন আর বর্ষ বরন নেই। তা যেন হয়ে উঠেছে উলঙ্গ উন্মাদনার এক মাধ্যম। এক ধরণের নোংরামি করে স্বরণীয় করে রাখার দিন। অন্যায় থেকে ফিরে থাকার শপথ নেয়ার পরিবর্তে অনেকে অনৈতিকতা আর নোংরামি দিয়ে শুরু করতে চায় দিনটি। বাঙ্গালী সংস্কৃতির চর্চার নামে মূলত এই সংস্কৃতিরই বিসর্জন দেয়া হচ্ছে। নিজ সংস্কৃতির বিসর্জনে অপসংস্কৃতিই হয়ে উঠেছে বরণীয়।
বর্ষবরণের মত অনুষ্ঠান গুলোতে বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে আমার খুব একটা যাওয়ার সুযোগ হয় না। ১লা বৈশাখ সাভারে গিয়েছিলাম। ব্যাক্তিগত কাজে। শুরুতেই আমাকে সময় দিয়েছেন আলাউদ্দিন ভাই। এরপর দেখা করি সাভার মডেল কলেজের অধ্যক্ষ জনাব তৌহিদুল ইসলাম স্যারের সাথে। যদিও তিনি স্যার, তবে আমার সাথে উনার সম্পর্কটা অনেকটা বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মত। অনেক বিষয়ে আলাপ করলাম। এক পর্যায়ে একটি পরামর্শও দিয়ে আসলাম। ‘আপনাদের কলেজের অনেক সুনাম সুখ্যাতি। আপনি চাইলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিতে পারেন, যা সর্বমহলে প্রসংশিত হবে।’
তৌহিদুল স্যার হাসলেন। বললেন, চিন্তা আছে।
মাহবুব ভাই, হাসান ভাইসহ কাজ শেষ করে যখন ফিরছিলাম, হেলাল ভাইকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চক্কর দেয়ার লোভ জাগলো। হেলাল ভাইসহ মোটর সাইকেল নিয়ে ঢুকলাম। আসলেই অনেক সুন্দর এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে একটি হল আছে, যেটি কিনা এশিয়ার সর্ববৃহৎ হল! মীর মোশারফ হোসেন হলটি দেখতে বেশ সুন্দর। পনেরো শ’র বেশি ছাত্র থাকতে পারে এই হলে। এক এক করে ঘুরে ঘুরে সব দেখলাম। হেলাল ভাই অনেকটা গাইড এর ভূমিকায়।
চারুকলার তত্ত্বাবধানে সাং¯কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। অনেক দর্শক বসে দেখছেন। সবার মাঝে একটা নতুন নতুন ভাব। গায়ে পাঞ্জাবি-পায়জামা। কেউ লাল-সাদা শাড়ি, কেউ সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। হাতে ফুল মাথায় ফুলের বেনি, অনেকে এসছেন ছেলে মেয়েদের নিয়ে। এত সুন্দর ফুটফুটে ছেলে মেয়েদের দেখলে অনেক সময় লোভ হয় একটু কাছে যাই কোলে তুলে নেই, একটু আদর করে দেই। অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে এসেছেন কিছু দেখানোর জন্য, কিছু শেখানোর জন্য। কিন্তু আসলে আমরা কী দেখাচ্ছি আর কী শেখাচ্ছি আমাদের সন্তানদের?
আমরা শিশুদের দেখাচ্ছি কীভাবে প্রেম-ভালোবাসার নামে বর্ষবরণের দিনেও বিশ্রীভাবে জোড়ায় জোড়ায় বসে কী করে আড্ডা দিতে হয়। কীভাবে পর পরুষ হয়েও মহিলাদের দিয়ে নিজের শরীরের উল্কি আকার প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হতে হয়। রিক্সায় করে কীভাবে জোড়া মিলিয়ে ঘুরাঘুরির নামে নেশা খোরের মত সময় অতিবাহিত করতে হয়। পান্তা-ইলিশের নামে  কীভাবে সমাজে বৈষম্য তৈরির রাস্তাকে উন্মুক্ত করে তুলতে হয়। কীভাবে হোলি খেলার নামে রং মাখামাখি করে ছেলেমেয়েদের অন্যায় ছোঁয়াছুঁয়িতে মেতে উঠতে হয়।
বর্ষবরণের উদযাপনে দেখছি কিছু ক্ষেত্রে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। রং হাতে নিয়ে আছে। সামনে কেউ হেটে যাচ্ছে, তার শরীরে রং মাখিয়ে দিচ্ছে খুব আলতো ভাবে। ছেলেও নিষেধ করছে না। একজন মেয়ের আলতো হাত শরীরে লাগছে, এটাতো কারো কারো কাছে অনেক বড় পাওয়া। এর ফলে কী হচ্ছে? স্পষ্টতই, সমাজে অনৈতিকতার চর্চা বেড়ে যাচ্ছে।
সন্ধায় যখন ফেইজবুক লগ ইন করলাম দেখি বন্ধুরা বিভিন্ন পত্রিকার লিংক শেয়ার করেছেন। ছাত্রী উত্যক্ত করার অপরাধে চানখারপুলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর, ছবি তুলতে চেষ্টা করায় ছাত্রলীগ কর্মী কর্তৃক সাংবাদিককে নাজেহাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ৩০/৩৫জন ছেলের একটি দলের দর্শনার্থী কয়েকজন মেয়েকে বিবস্ত্র করে অন্যায় আবদার পুরণের চেষ্টা
এবং এই কাজে বাধা দিতে গিয়ে আহত কয়েকজন, এক ছাত্র সংগঠনের প্রতিবাদী কর্মসূচি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে বিবস্ত্রকরণ। আমরা ভুলিনি ১৯৯৯ সালে এরকম বর্ষবরণে রাত ১২.০১ মিনিটে বাঁধনকে বিবস্ত্র করার কথা। যদিও সংসদে দাঁড়িয়ে তখন জয়নাল হাজারীর মত ব্যক্তি উল্টো বাঁধনেরই বিচার দাবি করেছিলেন। মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে হিং¯্র জানোয়ারের ছবি, কার্টুন, ঢোল, তবলা, বাঁশিই যেন আমাদের মূল সংস্কৃতি!
অথচ শৈশবে দেখেছি ঠিক এর উল্টো চিত্র। নতুন বছরকে বরণ পুরাতন বছরকে বিদায় জানানোর উদযাপনে ছিল ভিন্ন আমেজ। এই দিনে সকাল বেলা মা বোনেরা কোরআন পড়ে শুরু করতো। অন্য দিন কোরআন না পড়তে পারলেও এদিন সবাই পড়তো। চিন্তা থাকতো আজ সারাদিন কারো সাথে কোন খারাপ আচরন করবে না, কাউকে দেখতাম রোজা রাখতে, কেউ রাত জেগে নামাজ পড়তেন। ইচ্ছা থাকতো গত বছরে জেনে না জেনে যে অন্যায় করেছি, মিথ্যা বলেছি, মানুষের অধিকার নষ্ট করেছি, তা থেকে মুক্ত হতে হবে। এজন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতো, প্রতিজ্ঞা করতো নতুন বছরে এসব থেকে বেঁচে থাকার। মসজিদগুলোতে দোয়ার আয়োজন করা হতো। ব্যবসায়ী ভাইয়েরা পুরাতন হিসাবের খাতা বাদ দিয়ে নতুন হিসাবের খাতায় লিখা শুরু করতো। হিসাব চুকিয়ে ফেলার জন্য হালখাতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো।  মানুষের মাঝে লেনদেন পরিশোধ করার জন্য এক ধরনের পেরেশানি লক্ষ্য করতাম। এসবই ছিল আমাদের সংস্কৃতির অংশ।
 কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আমরা অতি আধুনিক হতে শুরু করেছি। বর্ষবরণ মানেই যেন নোংরামী। আমরা যেন এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছি। অতীত ঐতিহ্যকে হারিয়ে অনৈতিকতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি।
 সচেতন যুব সমাজকেই এর জন্য দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবর্তনের আওয়াজ তুলতে হবে। আমরা নোংরামী চাই না, বৈষম্য চাইনা, অনৈতিকতা চাইনা, মা-বোনদের ইজ্জত লুন্ঠন দেখতে চাইনা। সংস্কৃতির নামে অসুস্থ্যতার সয়লাব দেখতে চাই না।
আসুন আমরা বাংলাদেশের আকাশে ভূতের মতন চেপে বসা অপসংস্কৃতিকে দূর করে সুস্থ্য ধারার সংস্কৃতিকে আপন করে নেই। নববর্ষসহ জাতীয় দিবসগুলোকে নিজ সংস্কৃতির আলোকে উদযাপন করে অর্থবহ করে তুলি।

লেখক: সাংবাদিক

বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৫

ড. কনক সারওয়ার ॥ সাহসী সাংবাদিকতাই যার অপরাধ

                                                                মনির আহমেদ
জনতার কথা অনুষ্টান ধারনরত ড.কনক সরওয়ার

‘নেভার’, ‘অফকোর্স’ শব্দ দুটি দু’বার শুনলাম। এরপর একটু উঁচু গলায় কথা-বার্তা। ‘আপনি কোন আইনের বলে হাউজে ফোন করে আমার অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বললেন? আমাকে দেখান।’
‘আছে, আইন আছে।’
‘হ্যাঁ সেটাই তো জানতে চাচ্ছি, দেখান।’
‘আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন? আমি দেখাতে বাধ্য নই।’
এরপরই আরো উঁচু গলায় কথা বলতে শোনা যায়। ৬ জুলাই ২০১৩ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একুশে টেলিভিশনের জনতার কথা অনুষ্ঠানের রেকর্ডকৃত অংশ প্রচার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পরবর্তীতে জানতে চাইলে এ ধরণের আচরণ করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। কনক সরোওয়ার সেখানে সাহসিকতার সাথে ভূমিকা রাখেন ।
ড. কনক সারোওয়ার। একুশে টেলিভিশনের সাহসী, দক্ষ, যোগ্য ও চৌকষ সাংবাদিক। একুশে’র নিয়মিত আয়োজন ‘জনতার কথা’ অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় উপস্থাপক। বলা বাহুল্য, এই টিভি প্রোগ্রামটিতে জনসাধারণের মতের বহিপ্রকাশ ঘটে। সরকারী বিভিন্ন কার্যক্রমের সমস্যা ও সম্ভাবনাও তুলে ধরা হয়। এখানে সরকার দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের বা চলমান প্রক্রিয়া নিয়ে মুক্তমত প্রকাশের সুযোগ পায় মুক্তকামী সাধারণ মানুষ। এ প্রোগ্রাম দর্শকের পছন্দের। তবে, শাষক গোষ্ঠীর পছন্দের যে নয়, তা আজ প্রমানিত। কেননা এই টিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। স্বাভাবিক ভাবেই সরকারও এটাকে তাদের ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য হুমকি মনে করে।
সেই কারণেই কি গত মাসে গ্রেপ্তার হন কনক সারওয়ার? আসলে তার অপরাধ কী? তিনি কোন আইন ভেঙ্গেছেন? হাঁ, একটি আইনের আশ্রয়ে তার গ্রেপ্তারকে যৌক্তিক করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সকলের কাছেই হাস্যকর ঠেকেছে।
জগদ্দল পাথরের মত জাতির বুকে চেপে থাকা অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে জনতার কথাকে কনক সারওয়ার ধারাবাহিক ভাবে তুলে ধরেছিলেন। প্রকাশ পায় সরকারের হীন, ঘৃণিত সব কর্মকান্ড। কিন্তু ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানব হয়ে ওঠা সরকার তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। আর তাই গত ৩ মার্চ মঙ্গলবার ২০১৫ দুপুর ২ টায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি অগ্রহণযোগ্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে।
যুগে যুগে যারা সাহসের সাথে সাংবাদিকতা করেছেন তাদের উপর নেমে এসেছে অত্যাচার, নির্যাতন, কারাবাসের মত ভয়াবহ নিপিড়ন। সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির জাগ্রত বিবেক। সাংবাদিকদের কলমের ধারালো তীক্ষè খোঁচায় মুখোশধারীদের আসল রুপ উন্মোচিত হতে থাকে। প্রকাশিত হতে থাকে মুখোশের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা দুর্নীতিপরায়ন, হিং¯্রতায় ঢাকা আবরণ। আর বরাবরই অপরাধীরা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আক্রোশে ফেটে পড়েছে। লোভনীয় অফার কিংবা জীবনের ভয় দেখিয়ে বন্ধ করতে চায় সত্য পথে চলা জাগ্রত কলম সৈনিকের সাহসী পদচারণা।
আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারও অতীতের মত একই পথে হেঁটেছে। গলা টিপে গণমাধ্যম হত্যা করেছে। দেশের জনপ্রিয় গণমাধ্যম দৈনিক আমারদেশ, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টিভিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সম্প্রচারে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে একুশে টেলিভিশন। ঠুনকো অভিযোগে এসকল গণমাধ্যম বন্ধ করে দিয়ে জনতার কথা বলার অধিকারকে হত্যা করা হয়েছে। উল্টো দিকে দালাল গণমাধ্যম এবং দলীয় মনোভাবাপন্ন অসৎ সাংবাদিকদের দিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
সবাই জানে, সরকার বড় ধরণের ভুল করে চলছে। আর যাই হোক, দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের কৃতিত্বের অধিকারী এই দেশের মানুষকে বোকা ভাবাটাও হবে চরম বোকামী। দেশের কোথায় কী হচ্ছে, তার নেপথ্যে কারা, তা এদেশের মানুষ খুব ভালো করেই জানে। কোন গণমাধ্যম কী কারণে বন্ধ হচ্ছে তা স্পষ্ট করে বলা না হলেও জনতার বুঝতে বাকি নেই। আড়ালের ঘটনা সচেতন প্রত্যেকেই অনুধাবন করছে।
যে দেশে ইজ্জত হারিয়েও বিচার পায় না অসংখ্য মা বোনেরা, সে দেশে পর্নোগ্রাফির বিরুদ্ধে সরকার এত সোচ্চার; ভাবাই যায় না। পর্নোগ্রাফি হলো কি হলো না তার সত্যতা যাচাই না করেই গ্রেপ্তার করা হলো ইটিভি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুস সালাম ও সাংবাদিক কনক সারওয়ারকে।
এর আগেও আমরা সরকারের এমন অনেক বিতর্কিত কা- দেখেছি। জাতির সুযোগ্য সন্তানদের আইনের নামে বেআইনিভাবে বারবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাহসী কলম যোদ্ধা, আমারদেশের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কীভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তা জনগণ ভুলে যায়নি। সরকারের অপকর্ম জাতির সামনে তুলে ধরার অপরাধেই মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের একজন বিচারপতির কথোপকথন পত্রিকায় ফাঁস করার অভিযোগ ওঠার পর মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এবং রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে দু’টি মামলা হয়েছিল। এইসব মামলা যে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, তা বাংলাদেশের মানুষ ভালো করেই জানে।
মাহমুদুর রহমানের ওপর কী ধরণের নির্যাতন চালানো হয়েছে, তাও সবাই জানে। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সরকারের দালালি না করলেই তার ওপর খড়গ নেমে আসে।
নিজ বাসভবনের বেডরুমে খুন হয়েছেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহরুন রুনি। হত্যাকা-ের বিচার তো দূরের কথা, মামলার কোন ধরণের অগ্রগতি পর্যন্ত নেই। কেন, কারা তাদের খুন করছে এসব প্রশ্নের কোন উত্তর পাওয়া যায়নি। প্রশ্ন আসে, এ হত্যাকা-ের পেছনে কি তবে রাষ্ট্রীয় মদদ রয়েছে।
সরকারের দূর্নীতি, অপরাধ, জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান না করে সমানতালে সমর্থন করতে পারলেই সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা পায়। এর ব্যতিক্রম হলে হয় গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যায়। গ্রেপ্তার হন সত্যপথের সাহসী সাংবাদিক, সম্পাদক। এসব আর কত দেখতে হবে আমাদের? কোন নিস্তার কি পাব না? কেউ কি জেগে উঠবে না অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে?
##

শহীদ আসাদুল্লাহ তুহিন: যে স্মৃতি হৃদয়ে নাড়া দেয়

                                                             মনির আহমেদ
শহীদ আসাদুল্লাহ মাহফিলের সেচ্ছাসেবক হিসাবে

‘‘আমার কাছে মনে হয় আমার বাবা মরে নাই। সে সবসময় বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় এখনো বলে, যাচ্ছি মা। আবার ফিরে এসে বলে, কী করছ মা। আমার চারপাশে ঘুরাঘুরি করে। মনে হয় এই বুঝি আসছে, আবার চলে যাচ্ছে। আর আমি বলছি, সাবধানে যাস বাবা।’’
বলছিলেন শহীদ আসাদুল্লাহ তুহিনের মা কমেলা বেগম। পুত্র হারানোর শোকে কাতর এই মা কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে ফেলেছেন। তবে এখনো তিনি বুঝতে পারেননি কেন তার সন্তানকে র‌্যাব তার চোখের সামনে থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেছে ।
গত ১৯মার্চ সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে। সাথে ছিলেন রাশেদুল হাসান ভাই। কয়েক দফা বাস পরিবর্তন করে পৌছতে প্রায় সন্ধ্যা ছয়টা। পৌঁছে প্রিয় ভাই গোলাম মোস্তফা, তহুরুল ইসলাম সোহেলসহ পরিকল্পনা করি পরের দিনের শিডিউল নিয়ে- সকালে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া, পরবর্তীতে শহীদ আসাদুল্লাহ তুহিনের কবর জেয়ারত,  এরপরে অন্যান্য।
পরদিন পরিকল্পিত শিডিউল মেনেই কাজ শুরু হলো। প্রথমে অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। এরপর এক বাসায় নাস্তা খেয়ে করব জিয়ারতের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা দিই। গিয়েই দেখি আগে থেকেই আমাদের যাওয়ার খবর শুনে শহীদের সম্মানিত পিতা জনাব মো. একরামুল হক ও মামা কবির হোসেনসহ এলাকার অনেকে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। দেখেই প্রথমে শহীদের বাবাকে সালাম দিয়ে জড়িয়ে ধরি। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন তিনি। শান্তনা ব্যর্থ হলো।
শহীদের কবর জেয়ারত
কবর জেয়ারত শেষে মোস্তফা ভাইকে বললাম, মায়ের সাথে দেখা করবো। বাসায় গেলাম। বাবা-মা এবং মামার কাছ থেকে শুনতে থাকলাম আসাদুল্লাহ তুহিনের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা। তিন ভাই এক বোনের মাঝে তুহিন ছিলেন সবার ছোট। ছোট থেকে অতি আদরে বড় হয়েছিলেন। বড়ভাই এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর পারিবারিক বস্তবাতায় আর পড়াশোনা করতে পারেননি। মেজো ভাই এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর আর পড়তে পারেননি। সবার আশা ছিল তুহিন পড়াশুনা চালিয়ে যাবে। তাদের বংশের মুখ উজ্জল করবে। সে জন্যই তাকে সব সময় সবাই নজরে নজরে রাখতো। সবাই সহযোগিতা করতো।
শহীদের মা বাবার সাথে লেখক
মামা জানালেন, ‘তুহিন টাকা চেয়ে পায় নাই এমন কোন ঘটনা আমরা ঘটতে দেইনি। মা বললেন, যত সমস্যাই থাকুক সে প্রতিদিন স্কুলে যেতো। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও কখনও কলেজ কামাই করতে তাকে আমরা দেখিনি। রওয়ানা দিয়েই বলতো, মা যাচ্ছি। আবার ফিরে এসে কী করছি জানতে চাইতো।’
বলতে বলতে মা’র চোখ থেকে জল গড়ায়। মা’র কাছে জানতে চাইলাম, এমন কোন আচরণ কি আপনার মনে পড়ে যা আপনাকে আনন্দ দিত।
মা বললেন, ‘তার বাবা অথবা আমি যদি কখনো কোন বিষয়ে বকা দিতাম, ধমক দিয়ে কথা বলতাম, সব সময় মাথা নীচু করে দাড়িয়ে শুনতো। কখনো উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতো না। গ্রামের কেউ বলতে পারবেনা যে সে কারো সাথে কখনো খারাপ আচরণ করেছে। সবাই তাকে ভালোবাসতো। সেও সবাইকে শ্রদ্ধা করতো। ছোটদের আদর করতো। যে কোন সিদ্ধান্ত নিলে সে বিষড়ে সে অনঢ় থাকতো। তাকে কোন কাজ দিলে ঠিকভাবে করতো।’
মামা বললেন, ‘সে যে একাদশ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় সিটি কলেজ শিবিরের সভাপতি ছিল, এটা আমিও জানতাম না। আর প্রথমে শুনেও বিশ্বাস করতে পারিনি। কারণ আমি জানি কলেজ সভাপতি হিসেবে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়, এরা সিনিয়র হয়। মনে হয় প্রশাসনের কাছে এ দায়িত্বই তার বড় অপরাধ ছিল।’
মাত্র ১৭ বছর বয়সে তুহিনের উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি। দেহ ছিল সুঠাম। তাকে অনেকে বলতো, তুমি তো সেনাবাহীনিতে দাঁড়ালেই টিকে যাবে। এসব জানলাম তার দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে।
তুহিন নিজেও নাকি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশ সেবায় ভূমিকা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ২০১৩ সালে সে সেনাবাহিনীতে পরিক্ষা দিয়ে টিকেছিল। তখন তার কাছে সাড়ে চার লাখ টাকা চাওয়া হয়। তুহিন বলেছিল, আমার বাবা দরিদ্র মানুষ। এত টাকা দেয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় ।
এর পর তুহিন চাকরির আশা ছেড়ে দেয়। ২০১৪ সেশনে আবার সেনাবাহিনীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে সে আবেদন করে।
তুহিনের মামা কবির হোসেন বলেন, ‘হঠাৎ একদিন সে আমার মোটরসাইকেলের সামনে দাড়িয়ে আমার হাত ধরে কাঁদতে শুরু করে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মামা কী হয়েছে? কেউ কি কিছু বলেছে? বললো, না। আবার জিজ্ঞাসা করতেই সে বললো, মামা সেনাবাহীনিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, কিছু টাকা খরচ হলেও আপনি আমাকে সেনাবাহিনীতে ঢুকিয়ে দেন। আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে তুমি আবেদন করো, আমি ব্যবস্থা করছি। আমার কথা শুনে সে মহা খুশি। দুইতিন দিন পর বলে, মামা আমাকে ৪০০টাকা দেন। কেন জিজ্ঞেস করতেই বললো ২টা ট্রাউজার কিনবো। পাড়ার দুইজন গত বছর সেনাবাহিনীতে টিকেছে, তারা ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। এখন থেকেই তাদের কাছ থেকে ট্রেনিংয়ের বিষয়গুলো নিয়মিত দেখে নিতে পারলে পরে কষ্ট কম হবে। সেই আবেদনের পর গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২ তারিখ ওর বাছাইয়ের জন্য রাজশাহী রেঞ্জে দাঁড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হলো না। ২৭ জানুয়ারী ওর লাশ পাওয়া গেল হাসপাতালের লাশ ঘরে।’
এ বছরের ২৬ জানুয়ারী সকালে তুহিন মামার বাসায় গিয়েছিল মটোরসাইকেলের জন্য। কোথায় নাকি যাবে চিন্তা করেছিল। তারা তিন জন। মামা বলেছিলেন, এক জনের বেশী মোটরসাইকেল নিয়ে বের হলে পুলিশ রাস্তায় আটকাবে। তাই তিনি সাইকেল না নিতে বলেন। সেখান থেকে এসে সারাদিন আর বের হয়নি তুহিন। অথচ ২০১৩-১৪ সালের এই সময়ে সে বেশীর ভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকতো। দেশের পরিবেশ ভাল ছিল না। সে সময় যে বাড়িতে প্রশাসনের লোক যেতো, কাউকে না কাউকে ধরে নিয়ে যেতো।
বেলা তখন পৌনে তিনটা। দুপুরে খাওয়া শেষ করে তার রুমে বিশ্রাম নিচ্ছিল তুহিন। হঠাৎ বাসার সামনে এসে ২টা র‌্যাবের গাড়ি থামে। সাথে সাথে গাড়ি থেকে সবাই লাফিয়ে নেমে তুহিনের শোবার রুম ঘেরাও করে ফেলে। গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তন্ন তন্ন করে তাদের থাকার ঘর, পাকঘর সব খোঁজা হয়। র‌্যাব জামায়াত নেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের নাম লেখা একটি ক্যালেন্ডার ও ক্রিকেট খেলার ব্যাট, স্ট্যাম্প পায়। র‌্যাবের একজন বলে, বুলবুলের এক নম্বর লোক পাওয়া গেছে। এরপরই শুরু হয় তুহিনের ওপর নির্যাতন। সবার সমানে স্ট্যাম্প দিয়ে মারতে মারতে তিনটা স্টাম্পই ভেঙ্গে ফেলে। র‌্যাব সদস্যরা জিজ্ঞেস করে, কোথায় অস্ত্র রেখেছিস বল? তুহিন বলে, আমার কাছে কোন অস্ত্র নেই। র‌্যাবের একজন তুহিনদের গাছ থেকে লেবু পেড়ে বলে, এখন স্বীকার করবে না, যখন চামড়া ছিলে ছিলে লবন, লেবুর রস লাগাবো তখন স্বীকার করবে। অন্য একজন ভাঙ্গা স্ট্যাম্পগুলো তার মায়ের দিকে ছুড়ে মেরে বলে, লাকড়ি করার জন্য এগুলো রেখে গেলাম।
আমি ঘটনা শুনে স্তম্ভিত হই। কী অসভ্যতা! কী বর্বরতা! তুহিনের মামা সাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা ছবি দেখায়। তুহিনের শরীরের চামড়া কেটে সত্যিই লবন-লেবুর রস লাগানো হয়েছিল। তুহিনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর রাতভর তার উপর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন । নির্মম নির্যাতনের ফলে সে রাতেই তুহিন শাহাদাত বরণ করে। মৃত্যু নিশ্চিত জানার পর র‌্যাব তার লাশ সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়।
নির্যাতনের চিহ্ন
পরবর্তীতে র‌্যাব অজ্ঞাত ট্রাক চালককে আসামী করে মামলা করে। সেখানে তারা উল্লেখ করে, রাতে তুহিনকে নিয়ে যখন বের হয়, তখন সে পালিয়ে যাওয়ার জন্য লাফ দিলে বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চয়ে চলে যায়। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, ট্রাক চাপা দেয়ার তো কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। বরং আপনাদের নির্যাতনের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে । র‌্যাব তখন জানায়, উপর থেকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া আছে, সেভাবেই বললাম। আমাদের এর বাইরে কিছ’ বলার নাই।
হায়রে র‌্যাব! হায়রে অজ্ঞাত ট্রাক চালক! হায়রে আমাদের স্বাধীনতা!
সেদিন সকাল বেলায় র‌্যাব স্কুলের বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতা চলাকালীন সকাল ৯টায় স্কুল মাঠ থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ফুলকুড়ি স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র আল-আমিন ও রাফিকে। অপর দিকে হেফজুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসা হোষ্টেল থেকে দুপুর ২টায় গ্রেপ্তার করা হয় আলীম প্রথম বর্ষের ছাত্র মেহদি হাসানকে। আসাদুল্লাহ তুহিনকে নিয়ে গিয়েছিল বাসা থেকে। র‌্যাব ক্যাম্পে সবাইকে একাত্রে রাখা হয়েছিল। একে একে সবাইকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনকালে এক র‌্যাব সদস্য বলে, তোদের জীবন এখানে শেষ, যা সবাই অজু করে আয়। সবাই যেতে চাইছিল না, কিন্তু আসাদুল্লাহ তুহিন সাথে সাথে গিয়ে থেতলানো শরীর নিয়ে পাশ্বের পানি দিয়ে অজু করে নেয়।
এরপর সবার ওপর আবার নির্যাতন চলে। বিদ্যুত শক দেয়া হয়। শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষত করে লবন-লেবুর রস লাগিয়ে দেয়া হয়। এক পর্যায়ে সবাইকে র‌্যাব অফিসারের পা ধরে মাফ চাইতে বলে। বাকি সবাই মাফ চাইলেও তুহিন তখনও বলেছে, আমি আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করতে পারবো না। আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি কেন মাফ চাইবো?
তার দৃঢ়তা দেখে র‌্যাব সদস্যরা আবার নির্যাতন চালাতে থাকে। বাকী তিন জনকে পরদিন থানায় দিলেও তুহিনের লাশ দেয় হাসপাতালে। পরবর্তীতে নির্যাতনের শিকার অন্যরা এসব ঘটনা জানায়।
আমরা মনে হয় নিজের দেশেই পরাধীনতার জিঞ্জির পরে আছি। বর্বর সব ঘটনার কথা আমাদের প্রায়ই শুনতে হয়। স্তম্ভিত হয়ে যাই। যারা এই ছেলেদের নির্যাতন করছে, তাদের কি বৌ-বাচ্চা, ভাই-বোন নেই? তাদের কি একটুও মায়া হয় না? হয় তারা বিবেকহীন, আর না হয় রাব্বুল আলামীনের কাছ থেকে তারা অভিশপ্ত। আল্লাহ তাদের অন্তর থেকে মায়া উঠিয়ে নিয়েছেন।
কথা শেষ করে তুহিনকে যে রুম থেকে নিয়ে গিয়েছিল সেটি দেখে আমরা বের হই। মা’কে বললাম, আমাদের জন্য দোয়া করবেন। যেন আমরা তুহিন যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে কাজ করতো, আমরা যেন সে লক্ষ্যপানে পৌছতে পারি। তিনি চোখ মুছতে মুছতে বলছেন, বাবা তোমাদের জন্য দোয়া করি। সবার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেন তোমাদেরকে জালিমের হাত থেকে হেফাজত করেন। তোমাদের ইচ্ছা যেন আল্লাহ পুরণ করেন।
##