মনির আহমেদ
বাংলাদেশ। পাকিস্তানীদের পরিকল্পিত শোষণ-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নতুন যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা ছিল অনেক আগেই। সময়ের গতিধারায় সেই সুযোগও তৈরি হয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে যাত্রা শুরু হয় স্বপ্নের শোষনমুক্ত স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যাত্রা শুর করার পর থেকেই দেশটির রাষ্ট্রশক্তি দ্বারা শোষিত হয়েছে সাধারণ জনগণ, নির্যাতিত হয়েছে বিরোধী পক্ষ। গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে বিরোধী শক্তিকে স্বমূলে নিঃশ্চিহ্ন করার পায়তারা চলছে সব সময়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথাই বলি। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর থেকেই শুর হয় রাষ্ট্রশক্তির অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ১৯৭২থেবে ৭৪ সাল পর্যন্ত বিরোধী শক্তিকে শেষ করে একনায়কতন্ত্র কায়েমের চিন্তায় হত্যা করা হয় প্রায় ৩৭ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে। অসংখ্য মানুষের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। হত্যা করাটাই মনে হয়েছে শাসন ক্ষমতার একমাত্র কাজ। যা আমরা শর্মিলা বসু, মেজর ডালিমের লেখায় দেখতে পাই।
১৯৭৪ সালে শুরু হয় দূর্ভিক্ষ। রাস্তায় পড়ে থাকা জীবন্ত মানুষের দেহ থেকে কাক ঠোকর মেরে চোখ উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাড়ানোর ক্ষমতা সেই মানুষের। রাস্তায় পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট কুকুর-মানুষ ভাগাভাগি করে খায়, কারো প্রতি কারো কোন অভিযোগ নেই। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা ছবিতে এ অবস্থা স্পষ্ট ধরা পড়েছে।
১৯৭৫ সাল: গঠিত হয় বাকশাল। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দেখতে দেখতে চলে আসে ১৫ আগষ্ট, সেদিন শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে হত্যা করা হয় জিয়াউর রহমানকেও। শুর হয় নিয়ম রক্ষার আন্দোলন। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় আরোহন করেন। নয় বছর পর শুর হয় গণতন্ত্রের যাত্রা। ভালোয় ভালোয় কাটেও কিছু দিন।
১৯৯৮ সাল: রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক নির্যাতন শুর হয় বিরোধী শক্তির প্রতি। হত্যা করা হয় অর্ধশতাধিক তাজা প্রাণ। গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয় শায়খুল হাদীসের মত দেশবরেণ্য আলেমদের।
২০০৬ সাল: ২৯ অক্টোবর ক্ষমতা ছাড়ার কথা তৎকালীন জোট সরকারের। ২৮ অক্টোবর ঘটে ভিন্ন ঘটনা। আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ২৪জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। লগি-বৈঠার তা-বে ল-ভ- হয়ে যায় পুরো দেশ।
২০০৯ সাল: ধর্ম নিরপেক্ষবাদীরা ক্ষমতায় আরোহন করে তা স্থায়ী করার হীন উদ্দেশ্যে ২৫ ফেব্রয়ারি দেশের অতন্দ্র পহরী সেনাবাহিনীর চৌকষ কর্মকর্তাদের একত্রিত করে কৌশলে হত্যাযজ্ঞ চালায়। শুর হয় নির্যাতনের ভিন্ন মাত্রা। এর পরপরই হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা শরিফুজ্জামন নোমানীকে।
২০১০ সাল: বিরোধী শক্তি নির্মূলের নতুন কৌশল হাতে নেয় সরকার। নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে খুনের শিকার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারুক। এই ঘটনায় ছাত্রশিবিরের ওপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে শুরু হয় চিরুনী অভিযান, যার লক্ষ্যই ছিল এই সংগঠনকে নির্মূল করা। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় সারা দেশে প্রায় ২২ হাজার নেতা কর্মীকে। ২৯ জুন ঠুনকো অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নীজামী, দেশের খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহীদসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। এরপর শুরু হয় নির্যাতনের নতুন মাত্রা।
সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। অঘোষিত নিষিদ্ধের ফাঁধে পড়ে রাজনীতি। পরবর্তীতে নেতৃবৃন্দকে অভিযুক্ত করা হয় যুদ্ধাপরাধের তথাকথিত মামলায়। গ্রেপ্তার করা হয় অনেককেই। বিচার কার্য দ্রুত এগোতে থাকে।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। এ দিন আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ- ঘোষনা করা হয়। পরিকল্পিত মিথ্যা রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ জনগণ। হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় তাদের উপর। অন্যদিকে পুলিশ র্যাবের পাহারায় নাটক মঞ্চস্থ হয় শাহাবাগে। ২৮ ফেব্রুয়ারি গৃহপালিত ট্রাইবুনাল বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে দেশে লাখো জনতা। র্নিবিচারে গুলি চালানো হয় তাদের ওপর। এক সপ্তাহে হত্যা করা ২১৭জন নিরীহ মানুষকে। গেপ্তার করা হয় ৫২ হাজার সাধারণ মানুষকে। রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালানো হয় ১৭ হাজার মানুষের ওপর। পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১০৭জন। আহত হন হাজারো সাধারণ জনতা। মামলা করা হয় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্রশিবিরের তৎকালিন সভাপতি মেধাবী ছাত্র নেতা দেলাওয়ার হোসেরকে। রিমান্ডে একটানা ৫৩ দিন নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়া হয় তাঁকে। যা ইতিহাসে নজির বিহীন। ৫৪টি মামলা দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে, এখনো তিনি জালিমের কারাগারে বন্দী।
এদিকে শ্রদ্ধেয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবৎজীবন কারাদন্ড পরিবর্তন করে ফাঁসির রায় ঘোষনা করা হয়। ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টায় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি কার্যকর করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লার। হারিয়ে যায় ইতিহাসের এক নক্ষত্র, দেশের এক মূল্যবান সম্পদ। বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়, অংশগ্রহন করে বিশ্বের কোটি জনতা।
এখোনো থেমে নেই হায়নারা। এক এক করে তারা শেষ করে দিতে চায় ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। দমন করতে চায় বিরোধী শক্তিকে, ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে নিঃশেষ করে দিতে চায় ইসলামকে।
আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় কোটি তরুণ বেঁচে থাকতে আমাদের পথ চলাকে স্তব্ধ করে দেয়া যাবে না। আমরা জানি, রাত যত গভীর হয়, প্রভাত ততই নিকটে আসে। আমরা অপেক্ষা করছি একটি সোনালী সুর্যোদয়ের। আর তা আমরা দেখতে পাবোই ইনশাআল্লাহ।
likha obbahoto rakha uchit
উত্তরমুছুনআপনার লিখা অভ্যাহত রাখবেন আশা করি
উত্তরমুছুন