রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

একাত্তর জার্নাল ও একজন গডফাদারের টক শো


মনির আহমেদ
একাত্তর জার্নাল, নামের সাথেই কেমন একটা বিপ্লবী গন্ধ। একাত্তর আমাদের হৃদয়ের সাথে সম্পৃক্ত একটি শব্দ । একাত্তরেই আমরা হানাদার বাহিনীর শোষন নির্যাতনের হাত থেকে  মুক্তি পেয়েছিলাম। মাথা উঁচু করে দাড়াঁনোর সাহস অর্জন করেছিলাম। যদিও স্বাধীনতার আসল স্বাদ থেকে জাতি এখনও বঞ্চিত। যাক, এ সব বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।
বলছিলাম একাত্তর টেলিভিশন সম্পর্কে। আওয়ামী সরকারের গত মেয়াদেই টেলিভিশনটির যাত্রা শুরু। অনেকেই আবেদন করেছিলেন টিভি চ্যানেলের জন্য। জানা মতে, ৭১ নামের জন্য আবেদন করেছিলেন দুইজন। এক খ্যাতনামা সাংবাদিক এবিএম মুসা, অপরজন মোজাম্মেল বাবু। সরকারের সাথে সখ্যতা বেশী থাকায় মোজাম্মেল বাবুই মালিক হলেন একাত্তরের।
দিনে দিনে একাত্তর বিটিভির ভূমিকার দিকেই এগুতে থাকলো। একাত্তর টিভির সম্পর্কে বলতে গিয়ে দু’জন টকশো সঞ্চালকের কথা না বললেই নয়। এই দুই সঞ্চালক একটু বেশীই বলার চেষ্টা করেন। বেশী বলার জন্য টকশোর আমন্ত্রিত অতিথির কাছে একবার ধমকও খেয়েছিলেন একজন। এই দু’জন হচ্ছেন সামিয়া জামান ও নবনিতা চৌধুরী।
সামিয়া জামানের অবশ্য আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি চলচ্চিত্র নিয়েও কাজ করেন। দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ততই পরিবর্তিত হচ্ছে। একাত্তর টিভির দিকে তাকালে তাই স্পষ্ট বোঝা যায়।  বিগত সময়ে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা যখন পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ পর্যায়ে, তখন হঠাৎ করেই ২০১৩ সালের অক্টোবরে এই টেলিভিশনের পঞ্চাশ ভাগ শেয়ার বিক্রি করা হয় মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের কাছে। মোস্তফা কামাল তার ছেলে, দুই মেয়ে ও নিজের নামে কিনে নেন পঞ্চাশ ভাগ শেয়ার। ভালোয় ভালোয় সময় কেটে যাচ্ছে, কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না।
 সম্প্রতি হঠাৎ করেই শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় পরিচিত রাজনৈতিক নেতা শামিম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভিকে দেখলাম। বিষয় ছিল নারায়নগঞ্জের সাত খুন। মজার বিষয় হলো- যার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এবং যিনি অভিযোগ কারী, দুজনই আলোচক। মনে হলো বিচারকের ভূমিকায় শাকিল আহমেদ, একজন আসামী, অপরজন বাদী। বাদী এবং আসামীর চেয়ে বিচারকের অবস্থা দুর্বল হলে যেমনটি হয়, টকশোর অবস্থা দেখে তেমনই মনে হলো।
আশ্চর্য হয়েছি শাকিল সাহেবের নির্বুদ্ধিতা দেখে। তিনি মেহমান করলেন এমন দুজনকে যারা বিভিন্ন সময়ে পরস্পর পরস্পরের প্রতি অভিযোগ করে আসছেন। সাধারন মানুষও বুঝে যে, কিছু অভিযোগ সঠিক, কিছু অমুলক। যে বিষয়টি নিয়ে টকশো সে হত্যাকান্ড কার ইশারায়, কার প্রয়োজনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজিবী ও সাংবাদিক; সকলেই বুঝেন। শাকিল সাহেব যে বুঝেন না, তা কিন্তু নয়। একজন ডাকাতকে ধরে নিয়ে এসে সম্মান দিয়ে তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়- আপনি ডাকাতি করেছেন কি? তিনি কি বলবেন- হ্যাঁ আমি ডাকাতি করেছি? একই ভাবে টকশোর সঞ্চালক সেলিনা হায়াৎ আইভিকে বললেন, আপনি যে বার বার নারায়ন গঞ্জের গডফাদার বলেন, এই গডফাদার বলতে কাকে বুঝাতে চান? তার সহজ উত্তর, আমার সামনে যে বসে আছে সে এই গডফাদার। আবার শামীম ওসমানকে জিজ্ঞেস করলেন, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি ? এখানেই উত্তেজনার শুরু।
যাক, এই টকশো নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। শুধু এতটুকু বলতে চাই, একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে টকশোর আয়োজন করে দুজন রাজনৈতিক ব্যক্তির পারস্পরিক সৌজন্যবোধের জায়গাটাও নষ্ট করে দিয়ে প্রতিহিংসা আরো শতগুন বাড়িয়ে দেয়ার যে পরিবেশ তৈরি করা হলো, সেটা কার স্বার্থে? সরকারের নাকি জনগনের স্বার্থে? না একাত্তরকে বিটিভির চেয়ে বেশী ভূমিকা পালনকারী বুঝাতে এই অবস্থা?
মোজাম্মেল বাবু পঞ্চাশ ভাগ শেয়ার বিক্রি করলেও পরিচালক কিন্তু  আপনিই। কাজেই, অভিযোগ থেকে কাউকে বাঁচানোর জন্য এমন  তাবেদারি না করে সুযোগ থাকলে নিরপেক্ষ থেকে চ্যানেল পরিচালনা করুন। সকল মতকে গুরুত্ব দিন। সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গায় নিজেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। করো সমস্যা সমাধানের পথ বের করে দিতে ভূমিকা রাখুন। উত্তেজিত করতে নয়।
##

1 টি মন্তব্য: