সোমবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৪

ছাত্র রাজনীতি: লেজুড়বৃত্তিতে বাড়ছে অবক্ষয়


মনির আহমেদ

বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে অবক্ষয় বাড়ছেই। কোনভাবেই যেন লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা ছাত্র নেতাদের। ক’দিন আগেও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলে সুমন চন্দ্র নিহত হয়েছেন। একই ভাবে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ধরণের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ছয় বছরে অভ্যন্তরীন কোন্দলে ছাত্রলীগের ৩৯ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। যেখানে ছাত্র সমাজ চলমান রাজনীতির কলুষ মুক্ত থেকে দেশীয় রাজনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার কথা, সেখানে আমরা উল্টো চিত্র দেখছি। এর একটি অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায় ছাত্র সংগঠনগুলোর লেজুড়বৃত্তি। স্বকীয়তা হারিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলো আজ অবক্ষয়ে পেয়ে বসা রাজনৈতিক নেতাদের ইশারা-ইঙ্গিতে পরিচালিত হচ্ছে। এই লেখায় এ বিষয়েই বিশ্লেষণের প্রয়াস পাচ্ছি।
বলে রাখি- লেজুড়বৃত্তির বাইরে থেকে মেধাবী ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত ছাত্র সংগঠন যে দেশে নেই, তা বলা যাবে না। স্বকীয় অবস্থান ধরে রেখে নিজস্ব সংবিধানের আলোকে পরিচালিত সংগঠন এখনো রয়েছে। কিন্তু যেখানে বেশির ভাগ ছাত্র সংগঠনের একই অবস্থা, সেখানে এ ধরণের সংগঠনকে ব্যতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করা ছাড়া কোন উপায় থাকে না।
প্রশ্ন হলো, কেন ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত তরুণরা লেজুড়বৃত্তিতে মেতে থাকছে? কেনইবা যোগ্যতা অর্জনের চিন্তা থেকে সরে এসে নেতাকে খুশি করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে? যেখানে শিক্ষকদের পিতার সমতুল্য শ্রদ্ধা করার কথা, সেখানে একজন ছাত্র হয়েও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছে! ছাত্রছাত্রীদের সাথে যেখানে সুসম্পর্ক রেখে তাদের কল্যানে ভূমিকা রাখার কথা, সেখানে কেনইবা কিছু সংখ্যক ছাত্রকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে দলে আনার চেষ্টা করছে?
সোজা কথায় বললে, নানাভাবে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা মাথায় চেপে বসেছে ছাত্র রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের। ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রীর মাননীয় উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের বক্তব্য আমরা শুনেছি। তিনি যেভাবে ও যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে বোঝা যায় যে ছাত্রদের হালুয়া-রুটি ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে, যেন তারা মুরুব্বিদের কথা মেনে কাজ করে।
এইচ টি ইমাম ছাত্রলীগ নেতাদের বিসিএসে শুধু পাশ করার জন্য বলেছেন। আর পাশ করতে পারলে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করে দেয়ার ব্যবস্থা করবার আশ্বাস দিয়েছেন। মাননীয় উপদেষ্টাসহ সরকারী দলের অনেক নেতাই এ ধরণের বক্তব্য অতীতে রেখেছেন। তাদের কথার যথার্থ নমুনা দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে।
এলাকার এক ছোট ভাইয়ের কথা বলতে পারি। এসএসসি পাস করার পর সে ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়েছিল। পড়াশোনায় কখনও সে খুব ভাল ছিল না। একদিন দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলাম- কেমন আছো, কি করছ এখন?
বললো, ভাই ভালই আছি। অনেক কষ্ট করে এম পি সাহেবকে বলে ব্যাংকে একটা জব নিয়েছি। সেখানেই এখন ভালোভাবেই আছি।
আমি হাসতে হাসতে প্রশ্ন করলাম, এই কারণেই কি বাড়িতে আসলে বেশ রাজনীতি চর্চা করছো?
তার সহজ উত্তর, ভাই কী করব! না করে তো পারিনা। এখন তো অনেকটা বাধ্য। এই ছোট ভাইটিই বছর খানেক আগে প্রকাশ্য অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আহত করেছিল তার এলাকারই প্রতিপক্ষের কয়েকজন ছাত্রকে। ছাত্র নেতাদের অবৈধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তারা যে এই নেতাদের দিয়ে অনেক কিছু করিয়ে নিচ্ছেন, তা সহজেই বোঝা যায়। অনেক ছাত্র নেতাদের দ্বারা খুন, গুমসহ নানা ধরণের সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসবের পেছনে ইশারা রয়েছে, গ্রিন সিগনাল রয়েছে। আর এইচ টি ইমামের মত নেতারাই যে এসব ইশারা করেন, তা জনগণের বুঝতে বাকি নেই।
এখন অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, ছাত্র রাজনীতি করা মানে কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায়। ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাই সেই পথেই ঝুঁকছে। এইচ টি ইমাম তার বক্তব্যে একটি বড় সত্য প্রকাশ করেছেন। দলীয় ক্যাডারদের প্রশাসনে নিয়োগ দেয়ার ফলে তারা যে গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় বসাতে যা সম্ভব তা-ই করেছেন, তা এই আওয়ামী নেতার বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে। কাজেই এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায়, আজ যারা ছাত্রলীগ করছেন, তারা মুখে বড় কথা বললেও কোন আদর্শকে ধারণ করে মোটেও রাজনীতি করেন না। তাদের রাজনীতি মানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা। নেতাদের পিছু পিছু ঘুরে নিজেদের আখের গোছানো।
এ ধরণের রাজনীতিতে যে মেধার চর্চা নেই, মেধাবীর মূল্যায়ন নেই; তা দলের নেতাকর্মীদের কর্মকা-েই দৃশ্যমান। সিলেটে সুমন চন্দ্র নিহত হলেন আর ঢাকায় বসে ছাত্রলীগের সভাপতি বললেন, সুমন চন্দ্র ছাত্রলীগের কেউ নয়। এর জন্য তার সংগঠনের কোন দায় নেই।  দায়হীন থাকার যে সংস্কৃতি আমরা জাতীয় রাজনীতিতে দেখছি, এটা কি তার অন্ধ অনুকরণ নয়?
গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামীলীগের পক্ষে সারাদেশে যে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে, তা দিবালোকের মত স্পষ্ট। আর এই কারচুপির জন্য সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সদলবলে গিয়ে ভোট কেন্দ্র দখল, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা, জোরপূর্বক বের করে দেয়াসহ নানান অপকর্মের সাথে তারা জড়িত ছিল। নেতার হয়ে যে কোন অপকর্ম করতে তাদের কোনভাবেই বাধে বলে মনে হয় না।
জনগণের প্রাণের দাবি, ছাত্র রাজনীতি ছাত্রদের দ্বারাই পরিচালিত হবে। ওপর থেকে কেউ ছড়ি ঘোরাবে না। ছাত্ররা রাজনীতি করার মাধ্যমে মানুষ হিসেবে নিজেদের উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ পাবে। নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলে পরবর্তীতে দেশ ও সমাজের নেতৃত্বদানে সক্ষম হিসেবে প্রমানিত করবে। কিন্তু জনগণের দাবির প্রতিফলন ছাত্র রাজনীতিতে নেই। যার ফলে ছাত্র রাজনীতি দিনেদিনে আরো কলুষিত হচ্ছে, আর তার সাথে দেশের ভবিষ্যতও হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন।
একজন সচেতন মানুষ কখনোই একটি টেপ রেকর্ডারের মত নয়। একটি টেপ রেকর্ডার যে কোন কিছু ধারণ করে হুবহু তা তুলে ধরে। সচেতন যে কোন মন কোনকিছু শোনার পর তা যাচাই করে নেয়। নিজের বিবেচনা বোধকে কাজে লাগিয়ে কোন কাজে যুক্ত হয়। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির সাথে আজ যারা যুক্ত, তাদের মাঝে এ বিবেচনা বোধ আছে কি?
                                                                                                              .....চলবে



মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৪

তরুণ প্রজন্ম জানতে চায় দালাল আইনে ফাঁসীর আদেশ হওয়া সেই ২২ জন কে ???



স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতা বিরুধী অপরাধ করেছিল শেখ মজিবুর রহমান দালাল আইন করে তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে এসেছিলেন,সেই আইনে মোট লক্ষাধিক লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল,এর মধ্যে যাচাই- বাচাই করে ৩৫০০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তদন্ত শেষে ১১০০০ হাজার জনের বিরুদ্ধে সার্জশীট দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ২২ জন কে ফাঁসি, ৬৮ জনকে যাবজ্জীবন, ৭৫২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে ছিলেন আদালত।
তাদের বিরুদ্ধে খুন,ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগের মত অভিযোগ আমলে এনেছিলেন।
বাকী ২৪০০০ জনের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায়, আদালত তাদেরকে খালাশ প্রদান করেন।

এই সব তথ্য আওয়ামী খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম একটি টকশোতে উপস্থাপন করেন।

এখন জাতি আপনাদের কাছে জানতে চায় ফাঁসীর আদেশ হওয়া সেই ২২ জন কারা ছিল ????
কোন্ ৬৮ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়েছিল ????
বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রাপ্ত ৭৫২ জন কারা ছিল????
সেখানে কি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর এখন যাদের বিচার করা হচ্ছে তাদের কারো নাম ছিল?

যদি না থেকে থাকে, তাহলে কাদেরকে খুশি করার জন্য আজকে নেতৃবৃন্দকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বিষয়টা পরিষ্কার করবেন কি?

প্রিয় বন্ধুরা

আসসালামুআলাইকুম , 
কেমন আছেন ? জানি আপনারা হয়ত খুব ভাল নেই । কারন বাংলাদেশে বিরোধী জোটের অন্যতম প্রধান শক্তি বৃহত্তর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মূল নেতৃবৃন্দের বিষয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আওয়ামীলীগ গৃহপালিত ট্রাইবুনালকে দিয়ে জুডিশিয়াল কিলিং এর মাধ্যমে বিরোধী জোটকে নেতৃত্বশুন্য করার পায়তারার অংশ হিসাবে এক এক করে ফাঁসির আদেশ দিয়ে যাচ্ছে । বাংলাদেশের ইতিহাসে কলংক লেপনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে তারা । তাদের প্রয়োজন ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা । তারা ইতিমধ্যে বুঝে ফেলেছে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার পথে একমাত্র বাধা বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী ,সতরাং তাদেরকে নিঃশেষ করে দিতে পারলে আর ঠেকায় কে? এবং তারা এটাও ধরে নিয়েছে যে ,নেতৃবৃন্দদের হত্যা করে পেলতে পারলেই জামায়াতের শক্তিতে ভাটা পড়বে ,কর্মীবাহিনী হতাশ হয়ে যাবে ,কেউ আর আন্দোলনে সাহস পাবেনা , আর জামায়াত যদি আন্দোলন না করতে পারে তাহলে বাংলাদেশে আর কোন রাজনৈতিক শক্তি নেই যারা সরকারের পৃষ্ঠপোষক বাহীনির গুলির মূখে রাজপথে আন্দোলন করবে । সুতরাং সরকারের টার্গেট এক ঢিলে সকল পাখি শেষ । সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে তারা । মাঝে মাঝে নিজে নিজে হাসি ,হায়রে আওয়ামীলীগ ! তোমাদের জন্য দুঃখঃ হয় ,এই জন্য যে । যে কেউ কবর জগতে চলে যাওয়ার আগে তার একটা প্রজন্ম রেখে যেতে চায় ,আমার কাছে মনে হয় আওয়ামীলীগ সেটা চায় না । তারা জামায়াত কে জাসদের মত সংগঠন ধরে নিয়েছে । তারা ভাবছে যে জাসদকে স্বাধীনতা উত্তর সবচেয়ে বেশী নির্যাতন করেছি ,হত্যা করেছি ,খুন করেছি, গুম করেছি , সেই জাসদ যখন থালা নিয়ে রাস্তায় বসার অবস্থায় টিকে থাকার জন্য আমাদের সাথে এসে যোগ দিয়েছে ,জামায়াতকেও যদি নেতৃত্ব শুন্য করে দেয়া যায় তারাও এক সময় শক্তি শেষ হতে হতে হয়ত আমাদেরকেই শেষ ভরসা মনে করবে ,তখন বাংলাদেশ শুধু আওয়ামীলীগেরই থাকবে । হায়রে আওয়ামী স্বপ্ন !!!!

চলবে ------

শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রির ফাঁদে পা দেন নি তো ?

শেখ শওকত হোসেন নীলু ,রাজনীতিবিদ হিসাবে অনেক পরিচিতি তার ! বাম ঘরনার রাজনীতিবিদ হিসাবে তার উত্থান ,যেখানেই যান নিজের পছন্দের চেয়ার টা থাকা চাই , পান ও তিনি । তিনি বললেন আমরা নির্যাযিতদের পক্ষে , নির্যাতনকারীদের পক্ষে নয় । তাই নিজের পরামর্শ মুল্যায়িত না হওয়ায় মূলত ২০দলের কর্মকান্ডে তিনি অনিহা প্রদর্শন করলে, জোট থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি। গঠন করেন ১০ দলীয় জোট ।
গতকাল হঠাৎ চ্যানেল ২৪ এ তার টকশো, যদিও লাইব দেখতে পারিনি । ফেইজবুকের কল্যানে তার বক্তব্যটাই শুধু দেখতে পেলাম । তিনি বললেন সরকারের উচিৎ নির্যাতিতদের পক্ষে থাকা ,কিন্তু বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসে ,তারাই নির্যাতন কারীদের পক্ষে অবস্থান নেয় । তিনি আরো বলেন আমরা নির্যাতিতের পক্ষে কাজ করবো।
নিলু সাহেব মানুষ যত প্রবিন হয় , কারো বুদ্ধি বাড়ে কারো কমে ,কেউ অত্ম মর্যাদা নিয়ে বেচে থাকতে চায় ,কেউ জীবন নিয়ে । আমি জানিনা আপনার বুদ্ধি বাড়ছে না কমছে ? আপনি কি জীবন নিয়ে বেছে থাকতে চাচ্ছেন, না আত্ম মর্যাদা নিয়ে ? আপনার বক্তব্য নির্যাতিতদের পক্ষে থাকার ,না নির্যাতিতদের সহমর্মিতা পাওয়ার?
ডা: রেজওয়ান সিদ্দিকী ক;দিন আগে রেডিও তেহরানের কথা বার্তা অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে গনজাগরন মঞ্চের নেতৃবৃন্দের বিষয় নিয়ে বললেন যারা শয়তানের কাছে তাদের আত্মা বিক্রি করে দেয় তাদের চাহিদা মানুষের কাছে আবেগ সৃষ্টি করতে পারেনা ।
একই দিনে রাশেদ খান মেনন বলেছিলেন তাদের প্রয়োজনিয়তা ফুরিয়ে গেছে ,মানুষের কাছে এই মঞ্চের আর কোন প্রয়োজনীয়তা নাই ।
আমার কাছে কেন জানি জানতে ইচ্ছে হচ্ছে ড.রেজওয়ান সিদ্দিকির সেই বক্তব্য ; শয়তানের কাছে আত্মা বিক্রির ফাঁদে আপনি পা দেন নি তো ? নাকি আপনার প্রয়োজনিয়তা ২০ দলের কাছে তুলে ধরতে পারেননি ?

রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

নির্যাতিত জনপদ বাংলাদেশ


মনির আহমেদ

বাংলাদেশ। পাকিস্তানীদের পরিকল্পিত শোষণ-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নতুন যাত্রা শুরু করার পরিকল্পনা ছিল অনেক আগেই। সময়ের গতিধারায় সেই সুযোগও তৈরি হয়। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে যাত্রা শুরু হয় স্বপ্নের শোষনমুক্ত স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, যাত্রা শুর করার পর থেকেই দেশটির রাষ্ট্রশক্তি দ্বারা শোষিত হয়েছে সাধারণ জনগণ, নির্যাতিত হয়েছে বিরোধী পক্ষ। গণতন্ত্র রক্ষার কথা বলে বিরোধী শক্তিকে স্বমূলে নিঃশ্চিহ্ন করার পায়তারা চলছে সব সময়।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের কথাই বলি। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর থেকেই শুর হয় রাষ্ট্রশক্তির অত্যাচার ও হত্যাযজ্ঞ। ১৯৭২থেবে ৭৪ সাল পর্যন্ত বিরোধী শক্তিকে শেষ করে একনায়কতন্ত্র কায়েমের চিন্তায় হত্যা করা হয় প্রায় ৩৭ হাজার বিরোধী নেতাকর্মীকে। অসংখ্য মানুষের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। হত্যা করাটাই মনে হয়েছে শাসন ক্ষমতার একমাত্র কাজ। যা আমরা শর্মিলা বসু, মেজর ডালিমের লেখায় দেখতে পাই।
১৯৭৪ সালে শুরু হয় দূর্ভিক্ষ। রাস্তায় পড়ে থাকা জীবন্ত মানুষের দেহ থেকে কাক ঠোকর মেরে চোখ উঠিয়ে নিয়ে যায়, তাড়ানোর ক্ষমতা সেই মানুষের। রাস্তায় পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট কুকুর-মানুষ ভাগাভাগি করে খায়, কারো প্রতি কারো কোন অভিযোগ নেই। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের আঁকা ছবিতে এ অবস্থা স্পষ্ট ধরা পড়েছে।

১৯৭৫ সাল: গঠিত হয় বাকশাল। এরপর নির্যাতনের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। দেখতে দেখতে চলে আসে ১৫ আগষ্ট, সেদিন শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে হত্যা করা হয় জিয়াউর রহমানকেও। শুর হয় নিয়ম রক্ষার আন্দোলন। স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতায় আরোহন করেন। নয় বছর পর শুর হয় গণতন্ত্রের যাত্রা। ভালোয় ভালোয় কাটেও কিছু দিন।

১৯৯৮ সাল: রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক নির্যাতন শুর হয় বিরোধী শক্তির প্রতি। হত্যা করা হয় অর্ধশতাধিক তাজা প্রাণ। গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হয় শায়খুল হাদীসের মত দেশবরেণ্য আলেমদের।

২০০৬ সাল: ২৯ অক্টোবর ক্ষমতা ছাড়ার কথা তৎকালীন জোট সরকারের। ২৮ অক্টোবর ঘটে ভিন্ন ঘটনা। আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ২৪জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। লগি-বৈঠার তা-বে ল-ভ- হয়ে যায় পুরো দেশ।

২০০৯ সাল: ধর্ম নিরপেক্ষবাদীরা ক্ষমতায় আরোহন করে তা স্থায়ী করার হীন উদ্দেশ্যে ২৫ ফেব্রয়ারি দেশের অতন্দ্র পহরী সেনাবাহিনীর চৌকষ কর্মকর্তাদের একত্রিত করে কৌশলে হত্যাযজ্ঞ চালায়। শুর হয় নির্যাতনের ভিন্ন মাত্রা। এর পরপরই হত্যা করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রনেতা শরিফুজ্জামন নোমানীকে।

২০১০ সাল: বিরোধী শক্তি নির্মূলের নতুন কৌশল হাতে নেয় সরকার। নিজেদের অভ্যন্তরীন কোন্দলে খুনের শিকার হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ফারুক। এই ঘটনায় ছাত্রশিবিরের ওপর মিথ্যা দোষ চাপিয়ে শুরু হয় চিরুনী অভিযান, যার লক্ষ্যই ছিল এই সংগঠনকে নির্মূল করা। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় সারা দেশে প্রায় ২২ হাজার নেতা কর্মীকে। ২৯ জুন ঠুনকো অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় বিশিষ্ট রাজনীতিবীদ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নীজামী, দেশের খ্যাতনামা ইসলামী চিন্তাবীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহীদসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। এরপর শুরু হয় নির্যাতনের নতুন মাত্রা।
সারাদেশে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। অঘোষিত নিষিদ্ধের ফাঁধে পড়ে রাজনীতি। পরবর্তীতে নেতৃবৃন্দকে অভিযুক্ত করা হয় যুদ্ধাপরাধের তথাকথিত মামলায়। গ্রেপ্তার করা হয় অনেককেই। বিচার কার্য দ্রুত এগোতে থাকে।
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। এ দিন আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদ- ঘোষনা করা হয়। পরিকল্পিত মিথ্যা রায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসে সাধারণ জনগণ। হত্যাযজ্ঞ চালানো হয় তাদের উপর। অন্যদিকে পুলিশ র‌্যাবের পাহারায় নাটক মঞ্চস্থ হয় শাহাবাগে। ২৮ ফেব্রুয়ারি গৃহপালিত ট্রাইবুনাল বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন মাওলানা সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণা করে। প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে দেশে লাখো জনতা। র্নিবিচারে গুলি চালানো হয় তাদের ওপর। এক সপ্তাহে হত্যা করা ২১৭জন নিরীহ মানুষকে। গেপ্তার করা হয় ৫২ হাজার সাধারণ মানুষকে। রিমান্ডের নামে নির্যাতন চালানো হয় ১৭ হাজার মানুষের ওপর। পঙ্গুত্ব বরণ করেন ১০৭জন। আহত হন হাজারো সাধারণ জনতা। মামলা করা হয় প্রায় ৩ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার করা হয় ছাত্রশিবিরের তৎকালিন সভাপতি মেধাবী ছাত্র নেতা দেলাওয়ার হোসেরকে। রিমান্ডে একটানা ৫৩ দিন নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেওয়া হয় তাঁকে। যা ইতিহাসে নজির বিহীন। ৫৪টি মামলা দেওয়া হয় তার বিরুদ্ধে, এখনো তিনি জালিমের কারাগারে বন্দী।
এদিকে শ্রদ্ধেয় নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার যাবৎজীবন কারাদন্ড পরিবর্তন করে ফাঁসির রায় ঘোষনা করা হয়। ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টায় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি কার্যকর করা হয় আব্দুল কাদের মোল্লার। হারিয়ে যায় ইতিহাসের এক নক্ষত্র, দেশের এক মূল্যবান সম্পদ। বিশ্বের প্রায় সকল রাষ্ট্রে তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়, অংশগ্রহন করে বিশ্বের কোটি জনতা।

এখোনো থেমে নেই হায়নারা। এক এক করে তারা শেষ করে দিতে চায় ইসলামী আন্দোলনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে। দমন করতে চায় বিরোধী শক্তিকে, ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে নিঃশেষ করে দিতে চায় ইসলামকে।
আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশের ইসলামপ্রিয় কোটি তরুণ বেঁচে থাকতে আমাদের পথ চলাকে স্তব্ধ করে দেয়া যাবে না। আমরা জানি, রাত যত গভীর হয়, প্রভাত ততই নিকটে আসে। আমরা অপেক্ষা করছি একটি সোনালী সুর্যোদয়ের। আর তা আমরা দেখতে পাবোই ইনশাআল্লাহ।

একাত্তর জার্নাল ও একজন গডফাদারের টক শো


মনির আহমেদ
একাত্তর জার্নাল, নামের সাথেই কেমন একটা বিপ্লবী গন্ধ। একাত্তর আমাদের হৃদয়ের সাথে সম্পৃক্ত একটি শব্দ । একাত্তরেই আমরা হানাদার বাহিনীর শোষন নির্যাতনের হাত থেকে  মুক্তি পেয়েছিলাম। মাথা উঁচু করে দাড়াঁনোর সাহস অর্জন করেছিলাম। যদিও স্বাধীনতার আসল স্বাদ থেকে জাতি এখনও বঞ্চিত। যাক, এ সব বলে সময় নষ্ট করতে চাই না।
বলছিলাম একাত্তর টেলিভিশন সম্পর্কে। আওয়ামী সরকারের গত মেয়াদেই টেলিভিশনটির যাত্রা শুরু। অনেকেই আবেদন করেছিলেন টিভি চ্যানেলের জন্য। জানা মতে, ৭১ নামের জন্য আবেদন করেছিলেন দুইজন। এক খ্যাতনামা সাংবাদিক এবিএম মুসা, অপরজন মোজাম্মেল বাবু। সরকারের সাথে সখ্যতা বেশী থাকায় মোজাম্মেল বাবুই মালিক হলেন একাত্তরের।
দিনে দিনে একাত্তর বিটিভির ভূমিকার দিকেই এগুতে থাকলো। একাত্তর টিভির সম্পর্কে বলতে গিয়ে দু’জন টকশো সঞ্চালকের কথা না বললেই নয়। এই দুই সঞ্চালক একটু বেশীই বলার চেষ্টা করেন। বেশী বলার জন্য টকশোর আমন্ত্রিত অতিথির কাছে একবার ধমকও খেয়েছিলেন একজন। এই দু’জন হচ্ছেন সামিয়া জামান ও নবনিতা চৌধুরী।
সামিয়া জামানের অবশ্য আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি চলচ্চিত্র নিয়েও কাজ করেন। দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো ততই পরিবর্তিত হচ্ছে। একাত্তর টিভির দিকে তাকালে তাই স্পষ্ট বোঝা যায়।  বিগত সময়ে আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা যখন পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ পর্যায়ে, তখন হঠাৎ করেই ২০১৩ সালের অক্টোবরে এই টেলিভিশনের পঞ্চাশ ভাগ শেয়ার বিক্রি করা হয় মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালের কাছে। মোস্তফা কামাল তার ছেলে, দুই মেয়ে ও নিজের নামে কিনে নেন পঞ্চাশ ভাগ শেয়ার। ভালোয় ভালোয় সময় কেটে যাচ্ছে, কিন্তু বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না।
 সম্প্রতি হঠাৎ করেই শাকিল আহমেদের সঞ্চালনায় পরিচিত রাজনৈতিক নেতা শামিম ওসমান ও সেলিনা হায়াত আইভিকে দেখলাম। বিষয় ছিল নারায়নগঞ্জের সাত খুন। মজার বিষয় হলো- যার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এবং যিনি অভিযোগ কারী, দুজনই আলোচক। মনে হলো বিচারকের ভূমিকায় শাকিল আহমেদ, একজন আসামী, অপরজন বাদী। বাদী এবং আসামীর চেয়ে বিচারকের অবস্থা দুর্বল হলে যেমনটি হয়, টকশোর অবস্থা দেখে তেমনই মনে হলো।
আশ্চর্য হয়েছি শাকিল সাহেবের নির্বুদ্ধিতা দেখে। তিনি মেহমান করলেন এমন দুজনকে যারা বিভিন্ন সময়ে পরস্পর পরস্পরের প্রতি অভিযোগ করে আসছেন। সাধারন মানুষও বুঝে যে, কিছু অভিযোগ সঠিক, কিছু অমুলক। যে বিষয়টি নিয়ে টকশো সে হত্যাকান্ড কার ইশারায়, কার প্রয়োজনে হয়েছে, এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজিবী ও সাংবাদিক; সকলেই বুঝেন। শাকিল সাহেব যে বুঝেন না, তা কিন্তু নয়। একজন ডাকাতকে ধরে নিয়ে এসে সম্মান দিয়ে তাকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়- আপনি ডাকাতি করেছেন কি? তিনি কি বলবেন- হ্যাঁ আমি ডাকাতি করেছি? একই ভাবে টকশোর সঞ্চালক সেলিনা হায়াৎ আইভিকে বললেন, আপনি যে বার বার নারায়ন গঞ্জের গডফাদার বলেন, এই গডফাদার বলতে কাকে বুঝাতে চান? তার সহজ উত্তর, আমার সামনে যে বসে আছে সে এই গডফাদার। আবার শামীম ওসমানকে জিজ্ঞেস করলেন, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি ? এখানেই উত্তেজনার শুরু।
যাক, এই টকশো নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। শুধু এতটুকু বলতে চাই, একটি বিচারাধীন বিষয় নিয়ে টকশোর আয়োজন করে দুজন রাজনৈতিক ব্যক্তির পারস্পরিক সৌজন্যবোধের জায়গাটাও নষ্ট করে দিয়ে প্রতিহিংসা আরো শতগুন বাড়িয়ে দেয়ার যে পরিবেশ তৈরি করা হলো, সেটা কার স্বার্থে? সরকারের নাকি জনগনের স্বার্থে? না একাত্তরকে বিটিভির চেয়ে বেশী ভূমিকা পালনকারী বুঝাতে এই অবস্থা?
মোজাম্মেল বাবু পঞ্চাশ ভাগ শেয়ার বিক্রি করলেও পরিচালক কিন্তু  আপনিই। কাজেই, অভিযোগ থেকে কাউকে বাঁচানোর জন্য এমন  তাবেদারি না করে সুযোগ থাকলে নিরপেক্ষ থেকে চ্যানেল পরিচালনা করুন। সকল মতকে গুরুত্ব দিন। সাধারণ মানুষের আস্থার জায়গায় নিজেকে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। করো সমস্যা সমাধানের পথ বের করে দিতে ভূমিকা রাখুন। উত্তেজিত করতে নয়।
##

তালা - পাইকগাছা সড়কের বেহালদশা


 বিশেষ প্রতিনিধিঃ বাংলা সংবাদ২৪
সাতক্ষিরা জেলার তালা উপজেলার ১৮ মাইল এলাকা থেকে শুরু হয়ে তালা - পাইকগাছা সড়ক  চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে , অবস্থা এতই বেগতিক যে, যাত্রীদের হাসাহাসি করে বলতে শুনা গেছে ,কোন নয় মাসের গর্ভবতি মা এই রাস্তা দিয়ে কোথাও যাওয়ার জন্য গাড়ীতে উঠলে গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে ।
সরেজমিন পরিদর্শন করে জানা যায় ,১৮মাইল এলাকা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত প্রায় ৪৫-৫০ কিলোমিটার সড়ক দীর্ঘ দিন থেকে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে । ১৮ মাইল থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত যেতে আগে যেখানে সময় লাগত ২ থেকে আড়াই ঘন্টা ,এখন একই রাস্তা যেতে এখন সময় লাগে ৪ থেকে সাড়ে চার ঘন্টা । খুলনা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত যে বাস সার্বিস চালু ছিল তা অনেক দিন রাস্তা সমস্য থাকায় তালা বাজার পর্যন্ত গিয়ে আর যেতে পারছেনা । এর কারনে এলাকার সাধারন মানুষ যাতায়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । তালা থেকে কফিলমুনি হয়ে পাইকগাছা পর্যন্ত যাতায়াতে এখন মোটর সাইকেলই হয়ে পড়েছে প্রধান বাহন । এ ছাড়াও নছিমন,করিমন,ভেন ইত্যাদি যানবাহনে ঝুকি নিয়েই প্রতিদিন চলাচল করছে হাজারো মানুষ । খুলনা দক্ষিন অঞ্চলের বানিজ্যিক কেন্দ্র নামে খ্যাত কপিলমুনি বাজার এখন খুলনা থেকে মালামাল আনা নেয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার সাধারন মানুষকে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন মাশুল । হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনিয় দ্রব্য মুল্যের দাম । এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন ,রাস্তাটি সংস্কার কাজ শুরু করার আগ পর্যন্ত আমরা গাড়িতে করে কফিলমুনি পর্যন্ত মালামাল আনতে পারলেও ,কাজ শুরু করে রাস্তা খুড়ে ফেলে রাখায় সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না । তাই যাতায়াত খরচ বেড়ে যাচ্ছে, খরচ পোষানোর জন্য  আমাদেরকেও একটু বেশী মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে ।  কয়রা উপজেলার হুমায়ন কবির নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায় প্রতিদিনই রাস্তায় ছোট খাট দূর্ঘটনা ঘটছে ,মানুষ আহত হচ্ছে । একই কারনে সঠিক চিকিৎসা নেয়াও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এড.মোস্তফা লুৎফুল্লাহর  নিকট রাস্তার সংস্কার কাজটি কবে নাগাদ শেষ হতে পারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন গত এম পি সাহেবের আমলে কাজটির টেন্ডার হয় ,তারা কাজটি শুরু করে,কিছু অংশ কাজ শেষ করে । অধিকাংশ অংশ শেষ করতে না পারায় জনদুর্ভোগ বেড়ে যায়। আমি আসার পরে কাজটি করার জন্য চাইলেও ইঞ্জিনিয়ার সহ কয়েকজন পরামর্শ দের বর্ষায় কাজটি করলে টিকবেনা তাই এখনি কাজটি শুরু করা যাচ্ছে না, তবে বিষটি আমার নজরে আছে। এলাকার মানুষের আকুতি ইট ফেলে হলেও রাস্তাটি  আপাতত চলাচল উপযোগী করে অতি ধ্রুত সংস্কার কাজটি সম্পূর্ন করা হোক ।  এতে করে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশে লাগব হবে।

প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়; তাঁরাও দেশের সম্পদ


মনির আহমেদ
শাহাদাত হোসেন। কুমিল্লার মুরাদ নগরে ছেলেটির বাড়ি। জন্ম থেকেই সে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ছোটকাল থেকেই পড়াশুনায় তার আগ্রহ। এই আগ্রহই তাকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়। প্রতিবন্ধকতা জয় করে জিপিএ ৫ সহ কৃতিত্বের সাথে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে শাহাদাত।
২০১১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ার পর আমার সাথে শাহাদাতের পরিচয়। শাহাদাতের ওরই মতো আরো ক’জন বন্ধু আছে। একদিন তাদেরকে নিয়ে বসলাম।
হাসান নামের একজন বলছিল, ‘মনির ভাই আমরা অনেক বড় হতে চাই। মানুষের মত মানুষ হতে চাই। দেশের জন্য কিছু করতে চাই ,আমাদের কেউ গুরুত্ব দিতে চায় না। আমাদের পরিবারের নিয়মিত সহযোগিতা করার মত কোন অবস্থা নেই। আপনারা যদি আমাদের সহযোগিতা করেন, তাহলে আমরা সাহস হারাবো না। এগিয়ে যেতে পারবো।’
শাহাদাত আরো বললো,  ‘ভাই আমাদের টেপ রেকর্ডার দরকার। টেপ রেকর্ডার হলে শুনে মখস্ত করতে সুবিধা হয়।’
কলেজের ছোট ভাই হাবিবকে একটি টেপ রেকর্ডার কিনে দিতে বললাম। তাদের কথা শুনতে শুনতে  হৃদয়ে আবেগর ঝড় অনুভব করছিলাম। তাদের সবাইকে সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করলাম, যদিও প্রয়োজনের তুলনায় সেটা ছিল খুবই সামান্য। শাহাদাত ও হাসান দুজনই এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের  আইন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র। আমি আশা করি তারা আরো ভালো করবে। এই শাহাদাত ও হাসানের মত তরুণেরা সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না, তারা নিজেদেরকে সম্পদে পরিণত করতে চায়। 
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল লাভ করে এ কথাই আরো জোর দিয়ে জানান দিল শাহাদাত ও হাসানের  উত্তরসূরী অদম্য মেধাবী প্রতিবন্ধীরা। নিজেদের শারিরিক প্রতিবন্ধকতার কথা ভুলে ওরা যারপরনাই চেষ্টা করেছে মেধার যুদ্ধে টিকে থাকতে। কেউবা অন্যের জমিতে কামলা খেটে পরীক্ষা দিয়েছে, কেউবা পড়ালেখার খরচ জোগাতে চালিয়েছে রিক্সা, আবার কারো বাবা-মা অন্যের ঘরে কাজ করে সন্তানের পরীক্ষার ফি দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এভাবে নানা দিক থেকে তারা ছিল সামাজিক সুবিধা বঞ্চিত। অথচ কোন রকম পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পেয়ে তারাই কিনা সবাইকে তাক লাগিয়ে বাজিমাত করেছে। কেউ পেয়েছে এ প্লাস, কেউ অর্জন করেছে গোল্ডেন এ প্লাসের গৌরব।
আমরা আশা করেছিলাম এসব মেধাবীদের ভরণ-পোষণ বা দেখভালের দায়িত্ব নেবে সরকার। কিন্তু দূর্নীতি-দুঃশাসনে সরকার সবার থেকে এগিয়ে থাকলেও এই অসহায় মানুষের সহযোগিতার ক্ষেত্রে আছে সবচেয়ে পিছিয়ে। দেশের কোটি কোটি টাকা লুট করেও তাদের সামর্থ্য হয়নি কয়েকজন মেধাবী প্রতিবন্ধীর মুখে হাসি ফোটাবার।
এলাকা ভিত্তিক কিছু সামাজিক সংগঠন জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা দিলেও অদম্য মেধাবীদের আলাদা করে খবর তেমন কেউ নেননি।
শুধু একটি সংগঠন অদম্য মেধাবিদের জন্য আয়োজন করেছে সংবর্ধনার। এই সংগঠনটি প্রত্রিকায় প্রকাশিত সকল অদম্য মেধাবীকেই সংবর্ধনা দিয়েছে। বিভাগ ভিত্তিক চারটি অনুষ্ঠান করে মোট ১৪৬ জন অদম্য মেধাবীকে ক্রেষ্ট, একাডেমিক বই ও নগদ ৫০০০ টাকা করে সহায়তা প্রধান করে।
এই সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা প্রোগ্রামগুলোয় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল জাব্বার ও সেক্রেটারী জেনারেল আতিকুর রহমান। উপস্থিত ছাত্ররা যতদিন পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চায়, ততদিন ছাত্রশিবির তাদের পাশে থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
 রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ আয়োজিত সংবর্ধনায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধি সুমাইয়া আক্তার ও মাহমুদা আক্তার এসেছিল নীলফামারী থেকে। সুমাইয়া সংবর্ধনায় বক্তব্য রাখে। সে ছাত্রশিবিরের উদ্যোগরে জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তার বক্তব্যে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। এমনিতেই সে অন্ধ। মা নেই, বাবা  বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ্য, মাঝে মাঝে রিক্সা চালান। বয়োবৃদ্ধ বাবা যা আয় করেন, তা দিইে চলতে হয়। এমন অনেক দিন গেছে যে না খেয়ে স্কুলে যেতে হয়েছে সুমাইয়াকে। এরপরও পড়াশুনার আগ্রহের জায়গা থেকে সে একচুলও নড়েনি। তার আগ্রহই তাকে জিপিএ ৫ পেতে সহযোগিতা করেছে।
আর একজন মাহমুদা। বাবা নেই, মাকে নিয়ে এসেছিল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। ছাত্রশিবিরের কাছে তারা সহযোগিতা চায়। নেতৃবৃন্দ তাদের আশ্বস্ত করেন। জানান, সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করতে ছাত্রশিবির প্রস্তুত ।
আমাকে এ বিষয়ে আরো অনেক তথ্য জানিয়েছেন শিবিরেরর কেন্দ্রীয় স্কুল সম্পাদক মো: শাহীন আহমেদ খান। তাঁর তত্ত্বাবধানেই এই সংবর্ধনাগুলো অনুুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, শিবির সভাপতি এ সকল প্রোগ্রামে সমাজের বিত্তবানদেরএই বলে আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা মরে না করে। প্রত্যেকে যেন সাধ্য অনুযায়ী সাহায্যে এগিয়ে আসে এবং এইসব অদম্য মেধাবীদের সুন্দর ভবিষ্যত গঠনে সহযোগিতা করেন ।
ছাত্রশিবিরের এ সকল অনুষ্ঠানে শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দরাও মেহমান হিসাবে উপস্থিত থেকে সবসময় ছাত্রদের পাশে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অদম্য মেধাবী সংবর্ধনার বিষয়ে শিবির সভাপতির বক্তব্য হলো, ‘এই সংগঠন সবসময় ছাত্রদের কল্যানে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে। এ ধরণের আয়োজন ছাত্রদের পাশে থাকার একটি অংশ। দেশের সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক সমাজ, বিশিষ্টজনরা জানেন আমাদের প্রকাশ্যে কোন কার্যক্রম পরিচালিত করতে দেয়া হচ্ছে না, এমনকি  বিভিন্ন জেলায় আমরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম তাও আমরা প্রকাশ্যে করতে পারিনি। তবে, প্রশাসন ও সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের শত বাধা, হামলাসহ নানা বাস্তবতার মুখোমুখি হলেও আমরা থেমে যাইনি। আর সব কার্যক্রমের মতো আমরা সংবর্ধনা, সেবা ও কল্যাণমুলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও অদম্য মেধাবীদের সংবর্ধনা দিয়েছি। সাধারণ মেধাবীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে তাদের উৎসাহিত করেছি সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশগঠনে মনোযোগী হতে। তেমনিভাবেক অসহায় প্রতিবন্ধী মেধাবীদের আমাদের সাধ্য অনুযায়ী  আর্থিক অনুদানও দিয়ছি। তাদের পড়া-লেখার যাবতীয় ব্যয়ভারও বহনের ঘোষনা দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সমাজের মানুষের কাছে দোয়া চাই যেন সকল যুলুম নির্যাতন উপেক্ষা করে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ রাসুল (সঃ) এর আদর্শ বাস্তবায়নে ভুমিকা রাখতে পারি । ছাত্রসমাজসহ সাধারন মানুষের পাশে সবসময় থাকতে পারি।
আমরাও চাই শুধু ছাত্রশিবির নয়, সরকার, সমাজের প্রত্যেক বিত্তবান মানুষ ও সামাজিক সংগঠন প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসুক অদম্য মেধাবীদের সহযোগিতায়। তাদেরও  এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তারা দেশের বোঝা নয়, পরিণত হোক সম্পদে। এগিয়ে যাক দেশ এবং জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখার জায়গায়। দূর্নীতি ও শোষন মুক্ত সমাজ গঠনে তারাও ভূমিকা রাখুক, এই প্রত্যাশা আমাদের সবার।
লেখক ঃ সাংবাদিক ও লেখক


লঞ্চ দুর্ঘটনা, হারিয়ে যাওয়া শত লাশের দায়িত্ব কার?
মনির আহমেদ
পৃথিবীতে যাত্রা শুরুর পর থেকেই মানুষের বিভিন্ন বিষয়ে চাহিদা প্রকাশ পেতে থাকে। প্রয়োজনের আলোকে মানুষ আবিষ্কারও করেছে অনেক কিছু। নদী পথে যেমন যাতায়াতের প্রয়োজনে লঞ্চের আবিষ্কার ঘটেছে। লঞ্চ ছাড়াও নৌকা, ট্রলার, ষ্টিমার, স্পিড বোট নদী পথে যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম।
দ্বিতীয় আদম খ্যাত হযরত নুহ (আঃ) এর নৌকা তৈরির মধ্য দিয়েই মানুষের পানি পথে চলাচল করার  চিন্তা যোগ  হয়। একে একে আবিষ্কৃত হয় অনেক বড় বড় যানবাহন। টাইটানিকের নাম আমরা সকলে শুনি। পৃথিবির সবচেয়ে বড় লঞ্চ হিসাবে তৈরি করা হয়েছিল এটি।
নদী পথে যাতায়াতের এতসব আবিষ্কারের গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে, প্রায় ৫২ হাজার কোটি বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর দুই ভাগই জল, আর এক ভাগ স্থল। বিজ্ঞানীদের মতে, ২৯ ভাগ স্থল আর ৭১ ভাগ জলভাগ। বাংলাদেশ পৃথিবীর একটি ছোট রাষ্ট্র। ১ লক্ষ ৫৬ হাজার বর্গ কিলমিটারের এ দেশের উল্লেখযোগ্য অংশ জলভাগ। যার কারণে বলা হয়- নদী মাতৃক বাংলাদেশ । যার উপর দিয়ে বয়ে গেছে পদ্ধা, মেঘনা, যুমনা, সুরমা, কুশিয়ারা, শীতলক্ষা, বুড়িগঙ্গাসহ অনেক নদী।
সড়ক পথ অতীতের চেয়ে বাড়লেও এখনও রাজধানীর সাথে অনেক জেলার যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম নদীপথ। সুতরাং স্বাভাবিক কারণেই বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের একমাত্র যানবাহন ষ্টিমার, ট্রলার ও লঞ্চ। বাধ্য হয়েই অনেক মানুষের চলাচল করতে হচ্ছে লঞ্চ, ট্রলার বা ষ্টিমারে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রতি বছরই আমরা দেখি, জলপথে দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে এবং হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। ফলে অসহায় হয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। একমাত্র উপার্জনোক্ষম পরিবারের কর্তা ব্যক্তিকে হারিয়ে পথে বসতে হচ্ছে হাজারো পরিবারকে।
সর্বশেষ গত কিছুদিন আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের কাছে পদ্মা নদীতে এম এল পিনাক- ৬ নামের একটি যাত্রিবাহী  লঞ্চ ডুবে যায়। সাথে সাথে সেখানে ছুটে যান নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান। সেই লঞ্চে তাঁর তিন ভাগ্নীও ছিলেন বলে পত্রিকায় খবর ছাপিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সমবেধনাও  জানিয়েছেন। ২৫০ থেকে ৩০০ যাত্রী নিয়ে  ছেড়ে আসা পিনাক থেকে লাশ পাওয়া যায় ৩৮-৪২ জনের। দেড়শতাধিক লাশের কোন হদিসই পাওয়া যায়নি। আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা কয়েকদিন নদীর ধারে কান্নাকাটি করে কোন উপায় না পেয়ে শেষে ফিরে গিয়েছে। হা-হুতাশ আর চোখের পানিই এখন তাদের একমাত্র সম্বল ।
বিআইডব্লিউটির এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গত ৪৩ বছরে নৌ-দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৩১৬ জন যাত্রীর। এর মধ্যে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। সবচেয়ে বেশী প্রাণহানির ঘটনা ঘটে গত বছর। তিনটি বড় দুর্ঘটনায় গত বছর মৃত্যু হয় এক হাজার ১০৫ জনের। সর্বশেষ ঘটলো মুন্সীগঞ্জের ঘটনা। অভ্যন্তরীণ নৌ-পথে চলাচলকারী শতকরা ৮০ভাগ নৌযানেরই ফিটনেস নেই বলে ওই সমীক্ষা-প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ।
এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার। দুইশত মামলা নিষ্পত্তি হলেও দোষীদের কাউকেই শাস্তি দেয়া যায়নি। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত নৌ-দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ শতাধিক কমিটি গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র  পাঁচটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও লঞ্চডুবির ঘটনায় অনুরুপভাবে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও কম সময়ের মধ্যে দেয়ার কথা রয়েছে। প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখবে কিনা, আবার প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখলেও কতটুকু সুপারিশ বাস্তবায়ন হবে  তাই এখন দেখার বিষয় । বার বার লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটছে, মানুষ মারা যাচ্ছে। কোন বিচারই হচ্ছে না!
দুর্ঘটনার সাথে প্রকৃতপক্ষে কারা জড়িত? কাদের ইচ্ছায় আইনের তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই লঞ্চ চলাচল করছে?  যে লঞ্চে ৮০-১০০ জন যাত্রী উঠার কথা ছিল, সেখানে কীভাবে ২৫০-৩০০ যাত্রি  উঠছে? কারা লাভবান হচ্ছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা এখন সময়ের দাবি।
ঈদের পূর্বে ২৪ তারিখে আমি মাওয়া ঘাট হয়ে খুলনা যাচ্ছিলাম।  স্পিডবাটে সাধারণত ভাড়া ১৫০ টাকা। কিন্তু দিতে হলো ২৫০ টাকা। বোটে উঠেই ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম, ১০০ টাকা যে বেশী  দিতে হলো এই টাকা কি বোটের মালিক পায়? তার সোজা উত্তর- না। তাহলে কারা পায় জানতে চাইলে বলে- কতৃপক্ষ। একইভাবে লঞ্চেও ভাড়া দ্বিগুন বা কোন কোন ক্ষেত্রে এর চেয়েও বেশী পরিশোধ করতে হয়েছে যাত্রীদের। প্রশ্ন হলো, কারা এই কতৃপক্ষ? মাঝে মাঝে কানকথা শোনা যায় মন্ত্রী থেকে শুরু করে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ দলীয় নেতারাই হচ্ছেন  কর্তৃপক্ষের একেকজন। প্রতিদিন কত দিতে হয় মন্ত্রীসহ নেতৃবৃন্দদের? মাঝে মাঝে টাকার অঙ্কও শোনা যায় বাতাসে। গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার ভয়েই কি কখনো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া হবে না?
হাঁ, মাশুল দিতে হবে শুধু জনগণকে। জনগণ এভাবেই একটার পর একটা হত্যাকা-ের বলি হবেন, আর দূর্ভাগ্যকে দোষারোপ করে প্রস্তুত হবেন পরবর্তী  হত্যাকান্ডেকে দুর্ঘটনা বলে মেনে নিতে। কারণ, আমরা বাংলাদেশের জনগণ। এ দেশে সবচেয়ে মূল্যবান সরকারের গদি, আর সবচেয়ে মূল্যহীন মানুষের জীবন।
দিন যত যাচ্ছে জনসেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানের মানও বিশ্বব্যাপী তত বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোথায় উন্নয়ন? কিছু মানুষের চরিত্র আজো অপরিবর্তিত। তারা অর্থের জন্য যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। পদ্মায় সেতু হওয়ার কথা দিয়েছিল আওয়ামীলীগ সরকার। আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু তা হলো না। মার্কিন দূত ডব্লিউ ড্যান মজিনা বলেছেন, পদ্মাসেতু হলে এই লঞ্চ দুর্ঘটনা এড়ানো যেতো। কিন্তু কেন পদ্ধা সেতু হলো না? এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? তাহলে আমরা কি বলব, শুধু কিছু মানুষের অর্থের চাহিদা পুরণ করতেই বলি দেয়া হচ্ছে হাজারো মানুষকে। আমরা সমাধান চাই। অতি দ্রুতই পদ্মা সেতু হবে, এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ লাগব হবে; এই আমাদের প্রত্যাশা। 
লেখক :সাংবাদকি ও লখেক









শত মায়ের আর্তনাদ; দায় এড়ানোর সুযোগ আছে কি?


মনির আহমেদ
‘আমি বাইরের কাচারি ঘরে শুয়েছিলাম। খুব ঘুমও আসছিল। সারাদিনের বিভিন্ন কাজ শেষে ক্লান্ত। রাত তখন আনুমানিক ৩টা। শরীরের পাশে ঠা-া কিছু অনুভব করলাম। ঠা-া জিনিসটার পাশে একজন মানুষের অস্তিত্বও টের পেলাম। একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করলাম- কে? উত্তর এলো-  আমি তোমার বন্ধু। কণ্ঠ শুনে কুদ্দুসকে চিনতে অসুবিধা হয়নি। আমার বাল্য বন্ধু। তার সাথে একটি বন্দুক, ঠা-া জিনিসটা। রাজাকারদের তাড়া খেয়ে কুদ্দুস কোন রকম পালিয়ে এসেছে। রাত ২.৩০টা থেকে আমার পাশে শুয়ে ঘুমানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে ।’
মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বাবা। তখন আমি চতুর্থ কি পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ি। জিজ্ঞেস করলাম, বাবা তুমি মুক্তি যুদ্ধে গিয়েছিলে? তাঁর সহজ উত্তর, নারে বাবা আমি যেতে পারিনি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের অনেক সহযোগিতা করেছিলাম। বাবার কাছ থেকে শুনলাম কেন ও কীভাবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন। অনেক কথার ফাঁকে বললেন, অধিকার আদায়ের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র চেয়েছিলাম।
দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য- অধিকার অর্জিত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ আজো বঞ্চিত ভাতের অধিকার থেকে, বঞ্চিত বাঁচার অধিকার থেকে। কোথায় স্বাধীনতা? কোথায় অধিকার? একজন সুস্থ্য মানুষ বাসা থেকে বের হওয়ার পর সে জানে না বাসায় আবার  ফিরতে পারবে কিনা। নিজ বাসায় ঘুমানোর পর জানেনা তার বাসায় সে নিরাপদ কিনা।
এমন কিছু ঘটনার বর্ণনা পড়ছিলাম গত ৩১ আগষ্টের প্রথম আলো, মানবজমিন, সমকালসহ কয়েকটি পত্রিকায়। ব্যস্ততা থাকায় গত ৩০ আগষ্ট আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস ২০১৪ উপলক্ষে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিতে পারিনি। তাই একটু বেশী মনোযোগী হয়েই পত্রিকা পড়ছিলাম। নিজের অজান্তেই কখন যে চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়া শুরু হয়েছিল বুঝতেই পারিনি। পড়া যত সামনের দিকে এগুচ্ছিল, মন তত ডুকরে কেঁদে উঠছিল। কান্না চাপা দিয়ে রাখতে পারছিলাম না। মানুষ হিসেবে নিজেকে অসহায়, জড় পদার্থ মনে হচ্ছিল। পত্রিকা থেকে পাঠকদের জন্য কিছু অংশ তুলে ধরছি।
‘আমাদের প্রত্যেকটা সকাল হয় অপেক্ষা নিয়ে। এই বুঝি আরিয়ানের বাবার একটা খবর পাব। কিন্তু দিন শেষে কিছুই হয় না। আমরা শুধু ওকে ফেরত চাই।’
মুখে ওড়নাচাপা দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এসব কথা বলছিলেন শাম্মী সুলতানা। তাঁর স্বামী রাজধানীর ৭৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি খালিদ হাসান (সোহেল) গত বছরের ২৮ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটক থেকে নিখোঁজ হন। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছে পরিবার।
শাম্মী সুলতানা যখন মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর ছয় বছরের ছেলে সাদমান শিহাব আরিয়ান দর্শক সারিতে ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে বুকের কাছে ধরে আছে বাবার ছবি। ছবিতে আরিয়নের বাবার হাসি হাসি মুখ। কিন্তু আরিয়নের মুখ অন্ধকার, মলিন। শিশুটিকে জিজ্ঞেস করতেই বললো, ছবির লোকটা তার বাবা, যাঁকে আরিয়ান অনেক দিন ধরেই খুঁজে পাচ্ছে না। মা শাম্মী সুলতানার সঙ্গে এই ছবি নিয়ে নয় মাস ধরে বাবাকে খুঁজে ফিরছে আরিয়ান। সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুনের শিকার হওয়া ৯৭ পরিবারের মধ্যে ২২ পরিবারের সদস্যরা নিজেদের করুণ কাহিনী তুলে ধরেন। প্রতিটি ঘটনাতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ করা হয়। যদিও গুম-খুনের অভিযোগগুলো বরাবরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অস্বীকার করে আসছিলেন।
গত বছরের ২৭শে নভেম্বর রাতে কুমিল্লা থেকে গুম হওয়া সাবেক এমপি ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম হীরুর মেয়ে মাশরুফা ইসলাম বলেন, ‘আমার আব্বু ফ্রিডম ফাইটার ছিল। উনি কি দেশ স্বাধীন করেছে এই জন্য যে, এই দেশে তাকে গুম করা হবে? নয় মাস ধরে আমরা বাবাহারা হয়ে আছি। আমার বাবা হার্ট ও ডায়াবেটিসের রোগী। জানি না তার এখন কী অবস্থা। আমার আব্বুকে মেরে ফেলছে কিনা তাও জানি না। কেস করেছি তারও কোন আপডেট নাই।’
মাশরুফা বলেন, ‘বাবা যেখানেই থাকতো প্রতিদিন হয় আমাকে ফোন দিতো অথবা আমি বাবাকে ফোন দিতাম। নয় মাস চার দিন হলো আমাকে কেউ ফোন দেয় না। বলে না, মা তুমি কী করছো?’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তো তার পিতাকে হারিয়েছেন, স্বজন হারিয়েছেন। তিনি স্বজন হারানোর বেদনা বোঝেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাই আমার বাবাকে যেন ফিরিয়ে দেয়া হয়।’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
 মাশরুফার পিতা সাইফুল ইসলাম হীরুর সঙ্গে গুম হয়েছেন হুমায়ূন কবীর পারভেজ। তার স্ত্রী শাহনাজ আক্তার বলেন, ‘আমি আমার ছেলেমেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করেছি। ঈদের সময় আমার মেয়ে বলেছে, আমার তো বাবা নেই, আমি একটার বেশি জামা নেবো না। এ কথা শুনে আমি হু হু করে কেঁদেছি। আমার বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়ি আমার কাছে তাদের ছেলের খবর জানতে চান। আমি কোন উত্তর দিতে পারি না।’
শাহনাজ বলেন, ‘আমার স্বামীর কিছু লোন ছিল আমরা তা শোধ করতে পারছি না। স্বামীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিছু টাকা ছিল তা-ও তুলতে পারছি না। তার স্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক টাকা দেয় না। এখন তাহলে আমরা কোথায় যাবো? কীভাবে বাঁচবো?
তিনি বলেন, ‘নয় মাস ধরে কাঁদছি। এখন আমাদের কান্নাও হারিয়ে গেছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল শুকিয়ে গেছে। এখন আর কাঁদতেও পারি না।’
শাহনাজ বলেন, ‘তবু আমি বিশ্বাস করি, আমার স্বামী বেঁচে আছে। সে র‌্যাবের কাছেই আছে। আমার তিন ছেলেমেয়ে এতিম করবেন না।’ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘উনিও (প্রধানমন্ত্রী) তো আমাদের মতো স্বজনহারা। উনি কি আমাদের মতো স্বজনহারাদের কান্না শুনতে পান না?’
প্রায় সাড়ে চার বছর আগে গুম হওয়া বিএনপি নেতা ও ওয়ার্ড কমিশনার চৌধুরী আলমের মেয়ে মাসুদা আক্তার বলেন, ‘একটা মানুষ মরে যাওয়া স্বাভাবিক। খুন হলেও তার লাশ পাওয়া যায়। কিন্তু বাবাকে সাড়ে চার বছর ধরে গুম করে রাখা হয়েছে। আমার বাবাকে আমি ফেরত চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাবা ছাড়া আমরা কেমন আছি, কেউ খোঁজ নেয় না আমাদের। প্রতিবছর ২৫শে জুন আসলে বিএনপির পক্ষ থেকে ফোন করে যেতে বলে। আর কিছু না। এই দেশ কি এভাবেই চলতে থাকবে?’
 ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া ফেরার সময় গুম হওয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আল মুকাদ্দাসের পিতা মাওলানা আবদুল হামিদ বলেন, ‘৩০ মাস ধরে ছেলের জন্য অপেক্ষা করে আছি। কিন্তু ছেলে ফিরে আসে না। আমার স্ত্রী মাঝে মধ্যে স্বপ্ন দেখে- মুকাদ্দাস বাড়িতে এসেছে। সে কান্নাকাটি করে। ছেলের বন্ধুরা আসে। আড়াই বছরের প্রতিটা দিন আমাদের চোখের জল ফেলে কাটাতে হয়েছে।’
‘আমার বাবা একজন চিকিৎসক ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রেও চিকিৎসকেরা বিশেষ সুবিধা পান। কিন্তু আমার বাবাকে হাত-পা বেঁধে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে ঠান্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটা তো কোনো যুদ্ধক্ষেত্র ছিল না। তার পরও কেন এ ঘটনা ঘটল।’ দেশের মানুষের কাছে এ প্রশ্ন রেখেছেন লক্ষ্মীপুরে র‌্যাবের হাতে নিহত চিকিৎসক ফয়েজ আহমেদের মেয়ে উজমা কাওসার।
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুরে র‌্যাবের হাতে নিহত হন জামায়াতের জেলা নায়েবে আমির ফয়েজ আহমেদ। তাঁকে হাত-পা বেঁধে বাসার ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে নিচে এসে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ওই ঘটনার দুদিন পর পরিবারের সব সদস্য লক্ষ্মীপুর ছেড়ে যান। এরপর এক রকম আত্মগোপনে ছিল পরিবারটি। এই প্রথম গণমাধ্যম ও অন্যদের সামনে এসেছেন পরিবারের একজন সদস্য।
উজমা বলেন, ‘লে. কর্নেল তারেক সাঈদের নেতৃত্বে র‌্যাব সদস্যরা তাঁদের বাসায় হামলা চালান। র‌্যাব আসার পর ফয়েজ আহমদ তাঁর ছেলেকে ছাদে পালিয়ে যেতে বলেন। তাঁর ধারণা ছিল, ছেলের ওপর আক্রমণ হতে পারে। তিনি ভেবেছিলেন, র‌্যাব তাঁকে কিছুই করবে না। কিন্তু র‌্যাব  সদস্যরা ভেতরে ঢুকে ফয়েজ আহমেদকে টেনেহিঁচড়ে ছাদে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে প্রচন্ড মারধর করা হয়। আগে থেকেই ছাদের কার্নিশে লুকিয়ে থাকা ছেলে বাবার ওপর নির্যাতনের দৃশ্য দেখতে বাধ্য হয়েছেন।’
উজমা বলেন, ‘আমরা জানি না বাবার অপরাধ কী ছিল। আমাদের কী অপরাধ ছিল? শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্যই একটি পরিবারকে এত বড় মাশুল দিতে হচ্ছে!’
তিনি জানান, নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাঁরা এখনো লক্ষ্মীপুরে থাকতে পারছেন না। বাবার মরদেহ পাওয়ার বিষয়টিকে সৌভাগ্য হিসেবে মন্তব্য করে উজমা বলেন, ‘দেশে অনেকের স্বজনেরা এখনো গুম হয়ে আছেন। অনেকেই জানেন না তাঁদের স্বজনেরা কী অবস্থায় আছেন, কোথায় আছেন। সে হিসেবে তাঁদের চেয়ে আমরা ভাগ্যবান, অন্তত আমরা আমাদের বাবার মরদেহটা পেয়েছি।’
উজমা বলেন, ‘আর কোনো সন্তানকে যেন চোখের পানি ফেলতে না হয়, কোনো স্ত্রীকে যেন স্বজন হারিয়ে অনিশ্চিত জীবনে যেতে না হয়।’
মঞ্চে তখন রেহানা বানু। বলছিলেন, ‘মা সারাটা দিন দরজার দিকে তাকিয়ে বসে থাকেন। ভাবেন, সেলিম রেজা (পিন্টু) এসে বলবে, আমি এসে গেছি মা! দরজা খোলো।’
ঢাকার পল্লবী থেকে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে সেলিমকে তুলে নেওয়া হয়। তিনি সূত্রাপুর থানা ছাত্রদলের সভাপতি। রেহান বানু তাঁর বোন।
প্রতিবেদনে এসেছে, রেহানা বানুর বক্তব্য শুনে দর্শকের সারিতে বসা নিলুফার বেগম আর চুপ করে থাকতে পারলেন না। ছেলে তানভীরের জন্য হু হু করে কেঁদে উঠেন।
২০১১ সালে নয়া পল্টন থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শামীমের স্ত্রী ঝর্ণা খানম বলেন, ‘রাজনীতি করার জন্যই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। থানায় জিডি করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমার সন্তানের বয়স এখন দশ বছর। ছেলে জানতে চায় তার বাবাকে মেরে ফেলেছে কিনা? আমি কিছু জবাব দিতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনায় রাষ্ট্রের দায়। রাষ্ট্র কর্তৃক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। প্রতিটি পরিবারের একই দৃশ্য। মা সন্তানের জন্য, স্ত্রী স্বামীর জন্য, বোন ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। তারা জানতে পারছে না তাদের স্বজনদের ভাগ্যে আসলে কী হয়েছে।’
এতো ঘটনার পরও আমাদের দেশের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তা ব্যাক্তিরা মাঝে মাঝে বক্তব্য দেন, এসব কিছু না, দুএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। খোদ সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামানও  মাওলানা ফারুকী হত্যা ও মগবাজারের ট্রিপল মার্ডার নিয়ে একই বক্তব্য দিয়েছেন, যা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রশ্ন হলো, এতো ঘটনা সরকারের চোখ ফাকি দিয়ে ঘটার কি সুযোগ আছে ? যদি সুযোগ থাকে, তা হলে এই সরকারের কি এ দেশে প্রয়োজন আছে? তারা কি দেশ চালানোর অধিকার রাখে?
আমরা তো এই স্বাধীনতা চাইনি। আমরা তো স্বাধীন দেশে নাক ডেকে বাড়িতে ঘুমাবার নিশ্চয়তা চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম ভাত এবং বেঁচে থাকার অধীকার। আমরা চেয়েছিলাম এ দেশের নিরাপত্তা বাহিনী আমাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। গুম অথবা খুনের দায়িত্ব তো তাদের নয়! আমরা তো হানাহানির বাংলাদেশ চাইনি। ক্ষমতার মোহে পারিবারিক, সামাজিক বন্ধন ধ্বংসের বাংলাদেশ চাইনি। আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম হানাদার বাহিনী হাত থেকে মুক্ত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার। যেখানে ভাই ভাইকে তুচছ-তাচ্ছিল্য করবে না। পিতা তার সন্তান ক হত্যা করবে না। ঐশির মত সন্তানরা তার পিতা-মাতাকে হত্যা করবে না। বরং শ্রদ্ধা-ভালবাসা দিয়ে জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আগলে রাখবে। ক্ষমতার জন্য একে ওপরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে না। হায়েনার মত রক্তই শুধু কারো চাহিদা থাকবে না।
আমরা চাই যে সকল হত্যাকান্ড সংঘঠিত হয়েছে, তার সুষ্ঠ বিচার হোক। প্রশাসনের নিকট কোন ব্যাক্তি গুম থাকলে বা প্রশাসনের উদ্ধার করার সুযোগ থাকলে তাদেরকে অতি দ্রুত উদ্ধারের ব্যাবস্থা করা হোক। গুম, খুন, হত্যার রাজনীতি নয়। আমাদের রাজনীতি হোক মানুষের কল্যানে, দেশ ও জাতীর কল্যানে। স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে রাজনীতি নয়, দেশের স¦ার্থে হোক আমাদের রাজনীতি।
লেখক: সাংবাদিক ও  লখেক

ঠেকানো গেল না বিচারপতিদের অভিশংসন বিল


মনির আহমেদ
আইনজীবিরা বিভেদ দূরে ঠেলে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার ছিলেন যেন বিলটি পাশ না হয়। সোচ্চার ছিলেন পেশাজীবিরা, দেশের সচেতন মানুষেরা। কিন্তু কাউকে তোয়াক্কা করেনি বর্তমান আওয়ামী সরকার। কার্যত একদলীয় সংসদে পাশ হলো বিলটি।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিলটি উপস্থিত সাংসদদের ৩২৭ ভোট পেয়ে সর্বসম্মত ভাবে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশন শুরু হয়। নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে বিল পাসের কার্যক্রম শুরু হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক। বিলটির ওপর বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পাটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ জাতীয় পার্টি, সরকারের শরীক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিএনএফ এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যসহ মোট ১৫ জন জনমত যাচাই-বাছাই এবং ৩০টি সংশোধনী  প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হলেও পরে তা কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা বিলের পক্ষে অবস্থান নিলেও তড়িঘড়ি করে গুরত্বপূর্ণ এই বিল পাসের সমালোচনা করেন। তারা সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা ও জনমত যাচাইয়ের পর বিলটি পাসের দাবি উত্থাপন করেন। নানা ইস্যুতে পার্টির অভ্যন্তরে বিরোধ থাকলেও বিলের ওপর আলোচনায় তারা একই সুরে কথা বলেন। পরে সংসদের লবিতে স্থাপিত বুথে গোপন ব্যালটে বিভক্তি ভোটে বিলটি পাস হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা আলোচনা শেষে রাত ১০টা ১০ মিনিট থেকে ভোট দেয়া শুরু হয়। ৪০ মিনিটে ভোট দেয়ার কাজ শেষ হয়। পরে ভোট গণনা শেষে স্পিকার ফল ঘোষণা করেন। এ সময় টেবিল চাপড়ে উপস্থিত সংসদ সদস্যরা অভিনন্দন জানান।
এই বিলটি পাস হওয়ায় ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপিত হবে। ওই অনুচ্ছেদে কোন বিচারককে তার বিরুদ্ধে প্রমানিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যরে কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে অপসারণের বিধান ছিল। তবে এই অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের চাকরির বয়স বর্তমান বিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বহাল রাখা হয়েছে।
আমি ১৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার প্রত্রিকাগুলো খুব মনোযোগসহ পড়ছিলাম। কারণ এই দিনের পত্রিকাগুলো  ২টি কারনে গুরুত্বপূর্ন ছিল। এক, সংবিধান সংশোধন; দুই, মাওলানা সাঈদীর রায়। অনেকে মনে করেন ষড়োশ সংশোধনী নিয়ে কোন ধরনের আন্দোলন যেন হতে না পারে সেজন্যই মাওলানা সাঈদীর রায়ের দিনটিই তাই বেছে নেয়া হয়েছে। দেখা গিয়েছে, সাইদী সাহেবের রায় পরবর্তী বিক্ষোভ-হরতালে এই বিল পাশ তাই তেমনভাবে প্রচারের আলোয় আসেনি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক সংসদে বিলটি উত্থাপনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সাত দিনের মধ্যে সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ওই দিনই তা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। শুরু হয় সমাজের বিশিষ্টজন, আইনজীবি, রাজনীতিবিদদের প্রতিবাদ, বিরোধীতা। এই বিরোধীতা অন্যান্য সময়ের মত শুধু একপেশে বিরোধীতা ছিলনা। প্রতিবাদ শুরু করেন আওয়ামী ঘরণার লোকেরাও।
 বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর প্রথমেই সাংবাদিকরা সংসদীয় বিরোধীদলের কাছে না গিয়ে রাজনৈতিক বিরোধী দল হিসাবে যারা পরিচিত বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন। সংসদীয় বিরোধী দলকে দেশের বড় অংশের মানুষ যে গৃহপালিত বিরোধীদল মনে করেন, এটা তাই প্রমান করে। শুধু তাই নয়, স্বয়ং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হোসাইন মো: এরশাদও ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে কথা বলতে গিয়ে এক পর্যায়ে বলেন, যদি পক্ষে বলি তাহলে তো গৃহপালিত হয়ে যাব। তার বক্তব্য শুনে উপস্থিত সাংসদরা উচ্চ হাসিতে ফেটে পড়েন।
বলছিলাম, সাংবাদিকরা রাজনৈতিক বিরোধী দলের মতামত তুলে ধরেন। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা বর্তমান ‘অবৈধ’ সংসদের নেই দাবি করে বিলটি পাস হলে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন বিএনপি নেতারা। পরবর্তিতে ২০ দল দুই দিনের কর্মসূচিও পালন করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা বর্তমান অবৈধ সংসদের নেই। যে সংসদে জনগণের প্রতিনিধি নেই, ১৫৪ জন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন, সেই সংসদের হাতে বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা দিচ্ছে সরকার। এই ক্ষমতা বর্তমান সংসদের হাতে গেলে জনগণ ন্যায়বিচার পাবে না। শুধু একটি বিশেষ দলের বিচার হবে। তাই বিএনপি অভিশংসন বিলে সমর্থন করবে না। এ বিল পাশ হলে জনগণ তা মেনে নেবে না।
জামায়াত ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল ডা: শফিকুর রহমানও প্রতিবাদ করে বিবৃতি প্রধান করেন এবং আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, বাকশাল কায়েমের লক্ষেই সরকার সম্প্রচার নীতিমালার পর বিচারপতিদের অভিসংশন সংসদের হাতে নেয়ার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান মন্তব্য করেন,  বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে দেয়া হলে দেশে আইনের স্বাধীনতা থাকবে না। তিনি  বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। দেশ গণতন্ত্রশূন্যতায় ভুগছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহ অভিযোগ করেন,  সরকার আইন পরিবর্তন করে বাকশালের দিকে যাচ্ছে। সরকার ধাপে ধাপে বাকশাল কায়েমের লক্ষ্যে একটার পর একটা আইন পরিবর্তন করছে। শেখ মুজিবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার কাজে হাত দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তার পিতার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়নেই শেখ হাসিনা এখন কাজ করছেন।
তিনি বলেন, সময় আছে জনগণের ভাষা বুঝে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাদের পতন ঘটানো হবে। তখন পালানোর পথ পাবেন না।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে শাস্তি দিতেই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল সংসদে উত্থাপনা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ।
তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রীসহ তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সাত হাজার একশটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অনেক আসামীকে ছেড়েও দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অগণিত মামলার একটিও প্রত্যাহার করা হয়নি। উল্টো মামলা দিয়ে আরো হয়রানি করা হচ্ছে।
পূর্বে ব্যারিস্টার রফিকুল বলেন, বিচার ব্যবস্থা চিরতরে অধীনস্ত করতেই বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা এই একদলীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে গঠিত নয়, যে সংসদে বিরোধী দল নেই, সে সংসদে এই বিল পাস হতে পারে না। পাস হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
একইভাবে সমাজের বিশিষ্ট জন, আইজীবীবি ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হয়। ৯ সেপ্টেম্বর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ড. শাহদীন মালিক, সদস্য সচিব হিসেবে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও সহ-সদস্য সচিব হিসেবে সুব্রত চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এ নাম ঘোষণা করেন। তবে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ পরে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তারা এ কমিটিতে থাকবেন না।
পরদিন বিভিন্ন পত্রিকায় বড় করে সংবাদ ছাপানো হয় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ আইনজীবিরা। কেউ শিরোনাম করেন ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ডাক আইজীবীদের। কিন্তু আমরা এই বিল নিয়ে সরকারের একরোখা মনোভাব দেখলাম। প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ও এই বিষয়ে তার ফেইজবুক পেইজে বিচারপতিদের অভিশংসনের বিলের পক্ষে তার মতামত তুলে ধরেন।
যাচাই-বাছাই শেষে বিলের ওপর সংসদে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সংসদীয় কমিটি গত ৯ ও ১০ই সেপ্টেম্বর মাত্র দু’টি বৈঠকেই এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে।
এর আগে ২০১১ সালের ৩০শে জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়েছিল। বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটে ওই সংশোধনীর মাধ্যমে। সংসদে বিভক্তি ভোটের মাধ্যমে সেদিন বিলটি পাস হয়েছিল। বিলটির পক্ষে  ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছিল ২৯১টি, বিপক্ষে ‘না’ ভোট পড়েছিল মাত্র ১টি। নবম সংসদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য মো. ফজলুল আজিম ওই ‘না’ ভোটটি দিয়েছিলেন।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বিলটি বাছাই কমিটিতে পাঠিয়ে রিপোর্ট প্রদানের জন্য প্রস্তাব করেন মোট ৮ জন সংসদ সদস্য। এর মধ্যে মো. রস্তুম আলী ফরাজী চলতি বছর ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৫ জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন। একই প্রস্তাব করেন স্বতন্ত্র তাহজীব আলম সিদ্দিকী, জাতীয় পার্টির এম এ হান্নান, ইয়াহইয়া চৌধুরী ও মো. আবদুল মতিন এবং বিএনএফ’র এসএম আবুল কালাম আজাদ। এছাড়া তিন সদস্যের কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন জাতীয় পার্টির বেগম রওশন আরা মান্নান। আর ছয়জন সংসদ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব করেন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিম।
বিলটির ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দীন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ, মো. আবদুল মতিন, নুরুল ইসলাম মিলন, পীর ফজলুর রহমান, এম এ মান্নান, বেগম রওশন আরা মান্নান ও ইয়াহইয়া চৌধুরী, জাসদের মইন উদ্দীন খান বাদল, বিএনএফ’র এসএম আবদুল কালাম আজাদ এবং স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী, হাজী মো. সেলিম ও তাহজীব আলম সিদ্দিকী।
সংবিধান (ষোড়শ সংশোধন) বিল-২০১৪ সম্পর্কে স্থায়ী কমিটির রিপোর্টের ১ দফায় সংশোধনী এনেছেন তিনজন সংসদ সদস্য। এদের মধ্যে রুস্তম আলী ফরাজী বিচারপতিদের বয়স ৭০ বছর করার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া হাজী মো. সেলিম ও এম এ হান্নান দফা ১-এর ওপর সংশোধনী আনেন। দফা ২-এর ওপর সংশোধনী এসেছে মোট ২৭টি। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজী দফা ২ প্রস্তাব করেন, ‘বিচারকদের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও অসামর্থ্যরে কোন প্রস্তাব সংসদে উত্থাপিত হলে সংসদের নূন্যতম ১০০ জন সদস্যের উক্ত প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন থাকলে প্রস্তাবটি সরাসরি সংসদ কর্তৃক গঠিত জাজেস ইনকোয়ারি কমিশনে প্রেরিত হবে এবং সংসদ উক্ত কমিশনের তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে প্রমাণিত অসদাচরণ ও অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার  দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতার দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোন বিচারপতিকে অপসারণ করা যাবে না।’
তিনি দফা (২) এর প্রস্তাবিত উপ-দফা (৪) এর পর নতুন উপ-দফা (৫) সন্নিবেশের প্রস্তাব করেন। রুস্তুম আলী ফরাজী তার প্রস্তাবিত ৫ উপ-দফায় বলেন, এই আইনটি কার্যকর হওয়ার পর অনতিবিলম্বে উচ্চ আদালতের বিচারকদের নিয়োগের নীতিমালা তৈরি করার লক্ষে ‘বিচারক নিয়োগ কমিশন’ গঠন করিবেন। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, টিপু সুলতান, শেখ হাফিজুর রহমান ও ইয়াসিন আলী এবং নাজমুল হক প্রধান ও শিরীন আখতার বিলের ২ দফায় প্রস্তাবিত উপ-দফা (৩) এর তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ‘নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবেন’ শব্দাবলীর পরে ‘এবং একই সঙ্গে সংসদ বিচারক নিয়োগের নীতিমালা প্রণয়ন করিতে পারিবেন’ শব্দাবলী সন্নিবেশের প্রস্তাব করেন।
বিলের ওপর আলোচনায় সংসদ সদস্যরা যা বললেন-
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ সংবিধান সংশোধন বিল প্রসঙ্গে সংসদে কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, যদি বলি বিলটি সঠিক তাহলে আমাকে বলা হবো গৃহপালিত। এই সংসদেও রেওয়াজ হয়েছিল যদি ফাইল ছোড়াছুড়ি করতে পারি, তাহলেই সত্যিকারের বিরোধী দল। মানি না, মানবো না, সংসদ বর্জন করি, ওয়াকআউট করি তাহলেই বিরোধী দল!
তিনি আরও বলেন, আমি এই নীতিতে বিশ্বাস করি না। আমি আদর্শের রাজনীতি করি। এই বিলটি পাস হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করা হবে কিনা সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিচার বিভাগ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা অনেকের চেয়ে অনেক বেশি। আমার বিরুদ্ধে ৭০টির বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে আমি এই বিলটি সমর্থন করি।
পরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ বিলটিতে সমর্থন দেয়াতে উপস্থিত সংসদ নেতাসহ সবাই টেবিল চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
বেগম রওশন এরশাদ বলেন, বিলটিতে আমাদের সমর্থন রয়েছে। তবে এত তাড়াহুড়া করার কোন কারণ ছিল না।
স্বতন্ত্র এমপি হাজী সেলিম সংবিধান সংশোধন বিলটি পাসের আগে বিলটির ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাব করেন। এছাড়া বিএনএফ-এর আবুল কালাম আজাদ বিলটির সমর্থন করলেও একই সঙ্গে বিলটি পাসের আগে জনমত যাচাইয়ের প্র্রস্তাব দেন। জাতীয় পার্টির ইয়াহিয়া চৌধুরী তড়িঘড়ি করে বিলটি পাস না করে সংসদের বাছাই কমিটির মাধ্যমে আরও যাচাই-বাছাইয়ের প্রস্তাব দেন।
জাসদের মাইন উদ্দিন খান বাদল এই বিলটির যারা সমালোচনা করছেন তাদের সমালোচনা করে বলেন, তারা বিরোধিতা করলেও বলছেন না বিলটির কোথায় অসঙ্গতি রয়েছে। তিনি বলেন, জবাবদিহির ঊর্ধ্বে একমাত্র আল্লাহ্। তাই বিলটি জনমত যাচাইয়ে পাঠালেও একই উত্তর ফেরত আসবে।
আইনমন্ত্রী যা বলেন-
আইনমন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হক বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের জবাবে বলেন, বঙ্গবন্ধু এই সংবিধান দিয়ে সরকারকে শাসক থেকে সেবকে পরিণত করেছেন। এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। বিচারকদের আরও সুরক্ষিত করতেই সংশোধনী আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে সংবিধান অনুযায়ী নতুন আইন করা হবে। এতে বিচারকদের অসদাচরণ ও সামর্থ্যেরও ব্যাখ্যা থাকবে।  
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনা ৭ ও ১১ অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং তাদের পক্ষে এই ক্ষমতার প্রয়োগে কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হবে। এর প্রতিফলনে ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারককে তার বিরুদ্ধে প্রমাণিত অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্য সংখ্যার  দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে অপসারণের বিধান ছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে এই পদ্ধতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসন ব্যবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে কোন বিচারককে তার পদ হতে অপসারণ করা যাবে বলে বিধান করা হয়। ওই বিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে, কোন বিচারককে তার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা যাবে না। ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালের সামরিক ফরমানের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের অভিযোগে অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং অপর দু’জন প্রবীণ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত করার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থি। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত সংসদ রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের মতো উচ্চ আদালতের বিচারকদের দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার নীতি বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিদ্যমান রয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, ‘সংবিধানের বিদ্যমান অনুচ্ছেদ ৯৬ এর দফা ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭ ও ৮ এর পরিবর্তে ১৯৭২ সালের প্রণীত সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা ২, ৩ ও ৪ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদেরকে সংসদের মাধ্যমে অপসারণের বিধান পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে এই বিলটি সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে। উক্ত বিলের ৩ দফা অনুযায়ী কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সুতরাং ওই আইনে সুনির্দিষ্টকৃত পদ্ধতি অনুসরণে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারককে অপসারণের সুযোগ থাকবে না। এমতাবস্থায়, বিলটি আইনে পরিণত হইলে স্বচ্ছতা দৃশ্যমান হইবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে। ফলে বিচারকগণ তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব অবাধ ও সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে পালনের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো সমুন্নত রাখতে পারবেন।’
প্রশ্ন হলো, বিষয়টি যেহেতু এতই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে বিশিষ্ট আইনজীবিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে তাদের মতামত নিলে কি খুব সমস্যা তৈরী হতো?  জনমত যাইয়ের পরামর্শ গ্রহন করলে কি খুব সমস্যা হতো? সবই এড়িয়ে যাওয়া হলো। বিদেশী গনমাধ্যমগুলোর মধ্যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ইকনোমিষ্টে এ বিষয়ে বক্তব্য এসেছে- প্রধানমন্ত্রীকে একক ক্ষমতাধর বানানোর জন্যই নীতিমালা, আইন করা হচ্ছে ।
১৯৭২ সালে দেশে ফেরার পর শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবও বিরোধী পক্ষকে স্বমূলে ধ্বংস করে দিয়ে বাকশাল কায়েমের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। চারটি ছাড়া সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সকল সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছিলেন এবং সেই নিষিদ্ধের ফাঁদে আওয়ামীলীগও পড়েছিলো। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী   বাকশাল কায়েমও করেছিলেন। আওয়ামীলীগ শেখ মুজিবের স্বপ্ন পূরণে ৭২এর সংবিধান ফিরে যাওয়ার কথা বলছেন, অথচ শেখ মুজিবের সর্বশেষ স্বপ্ন ৭২এর সংবিধান ছিল না, ছিল বাকশাল। আসলে আওয়ামীলীগ ভিতরে ভিতরে বাকশালের স্বপ্ন দেখছেন বলে সচেতন মানুষ মনে করেন।
এখন তো আর কথা বলার সুযোগ নাই। কারণ কথা বললে সংবিধানের বিরুদ্ধে বলা হবে। হতে পারে মামলা, হয়রানি, জেল। তাই মনে হয় আন্দোলন ঘোষণাকারীরাও সবাই ইতিমধ্যে চুপসে যাওয়ার নীতি অবলম্বন করেতে শুরু করেছেন। যাদের হাতে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের মত গুরু দায়িত্ব ছিল, তারাও শেষ পর্যন্ত উপেক্ষিত হলো। উপেক্ষিত হলো জাতি, উপেক্ষিত হলো জনতা। বিজয় হলো সরকারের। বাংলাদেশে যে ভাবে সংশোধন আর পরিবর্তনের রাজনীতি শুরু হয়েছে , তাতে এখন দেখার অপেক্ষা এই বিল কতদিন টিকে থাকে ।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক